পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ভারত থেকে অবশেষে পেঁয়াজ আসছে। আগামী সপ্তাহে দেশে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকবে বলে জানান আমদানিকারকরা। এবার বাম্পার ফলনে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের চাপে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। উৎপাদন সংকটে পড়ায় পাঁচ মাস আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির প্রধান বাজার ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েন দেশের ক্রেতারা। এরপর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হলেও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এখনও অনেক বেশি দামে ক্রেতাদের পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
মৌসুমের দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পেতে শুরু করেছেন। এই অবস্থায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় স্থানীয় বাজারে নতুন করে পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে। তবে এখনও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আনা শুরু হলে দাম গত বছরের মতো কমে আসবে। ফলে দেশে মৌসুমে উৎপাদিত পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য পাবেন না কৃষকরা।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন সমকালকে বলেন, ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও এখনও অনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি। ভারতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানার পরে বাংলাদেশ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এখন সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুয়ায়ী, গত বুধবার দেশটির খাদ্য ও ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রী রাম বিলাস পাসোয়ান জানান, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। গত বছরের তুলনায় মার্চে ৪০ লাখ টন বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হলে কৃষকরা ভালো দাম পাবেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। ভারতের বাজারেই সে সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ রুপি। ভারত সরকার মজুদের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। দাম নিয়ন্ত্রণে মিসর, আফগানিস্তান ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় বাংলাদেশও মিয়ানমার, চীন, মিসর, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে টিসিবির মাধ্যমে খোলা ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। এর পরও দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আর এখন ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণায় দাম কমতে শুরু করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিতে ২০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও আমদানি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে এক দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশ কমে গেছে। গতকাল শ্যামবাজারে প্রতি কেজি চীন, মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও মিয়ানমার, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. সুবজ মিয়া জানান, হল্যান্ডের পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন। এক দিন আগেও ৭৫ টাকা ছিল। সপ্তাহের শুরুতে এই পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি করেছেন। পাকিস্তানের পেঁয়াজ গতকাল ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। দু’দিন আগেও ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন।
আমাদের হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, হিলি বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন জানান, ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিলেও এখনও নোটিশ করেনি। আমদানিকারকরা আমদানির অপেক্ষায় আছেন। কারণ শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন। রোববার এলসি খুললে সোম ও মঙ্গলবার থেকে দেশে পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। দেশটির রপ্তানিকারকরা তাদের জানিয়েছেন, নোটিশ জারির ওপর পেঁয়াজের দাম নির্ভর করবে। তবে বর্তমানে দেশটির বাজারে পাইকারিতে ১৫ থেকে ২৫ রুপিতে মানভেদে পেঁয়াজ বেচাকেনা হচ্ছে। এই দামে আমদানি হলে বন্দরে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বেচাকেনা করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমদানির পেঁয়াজ দেশে এলে মৌসুমে দেশি পেঁয়াজের দাম কমলে কৃষকরা যৌক্তিক মূল্য পাবেন না। তবে এখন আমদানি না হলে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে যাবে। তাতে জুন-জুলাইয়ের পরে আবার সংকট তৈরি হবে। সব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় ধারাবাহিকভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। পরে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম ধীরে ধীরে কমে ১২০ টাকায় নেমে ছিল। এখন আমদানির ঘোষণায় ১০০ টাকার নিচে নেমেছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।