ফ্রেমের দুনিয়ায় বেশ কয়েক বছর আগেই পা দিয়েছিলেন তানজিন তিশা। তবে এলাম, দেখলাম আর জয় করলাম- বিষয়টা মোটেই এমন ছিল না এ অভিনেত্রীর জন্য। মিউজিক ভিডিও, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক প্রতিটি মাধ্যমেই ধারাবাহিকভাবে রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। প্রমাণ করেছেন নিজেকে ও আপন অভিনয়দক্ষতাকে। তাকে নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ
আকাশের সঙ্গে মানুষের অদ্ভুত ধরনের মিল আছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের রং পাল্টে যায়। আবার মানুষের মনে ক্ষণে ক্ষণে আসে পরিবর্তন। এই পরিবর্তন অবশ্য সময়ের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য। অভিনেত্রী তানজিন তিশাও তাই ভাবেন। না হলে প্রতিদিন ঘুম থেকেই উঠে শুটিংয়ের জন্য তাকে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়? শুটিংয়ে লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন-শব্দগুলো সবসময় কানের মধ্যে বাজতেই থাকে। এমন জীবন কি কখনও ভেবেছিলেন এ অভিনেত্রী।
২০১১ সালে অনেকটা শখের বশে একটি ম্যাগাজিনের জন্য বেশকিছু ছবি তুলেছিলেন। কে জানত, সেই থেকে তিনি জড়িয়ে যাবেন বিনোদন অঙ্গনের সঙ্গে। বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। আর মেয়ের ইচ্ছা ছিল, তিনি হবেন ব্যারিস্টার। কিন্তু শখের তাড়নায় পা রাখা সেই মেয়েটি এখন পুরোদমে অভিনেত্রী। অভিনয়ের ভুবনে চলতে চলতে নিজের শক্ত অবস্থানও গড়েছেন তিনি। টিভি পর্দায় এখন প্রতিদিনই ফ্রেমবন্দি থাকেন তিনি। মাসের বেশিরভাগ সময় তিনি ব্যস্ত থাকেন শুটিংয়ে। গত কয়েক বছরে অভিনয় নিয়ে তানজিন তিশার ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। অভিনয়ে নিজেকে যেমন অনেক বেশি শানিত করেছেন, ঠিক তেমনি পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি নিজেই তা স্বীকার করে বলেন, ‘শুরুর দিকে অভিনয় নিয়ে অতটা সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু যখন মনেপ্রাণে ভালো অভিনয়ের চেষ্টা শুরু করি, তখন থেকেই আমার অভিনীত নাটক-টেলিছবির জন্য সাড়া পেতে শুরু করি।’ সত্যিই ভালোবেসে কোনো কাজ করলে তাতে একসময় সফল হওয়া সম্ভব। জীবনের বাঁকবদলের সময়ে তিশা এখনও স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাননি। নিজের বর্তমানে অবস্থানের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতে নারাজ এ অভিনেত্রী। বরং প্রতিনিয়ত নিজেকে আরও পরিণত করতে চান তিনি। টিভি পর্দায় অসংখ্য নাটকে অভিনয় যেমন তিশার জনপ্রিয়তার জানান দিচ্ছে, ঠিক তেমনি প্রশ্ন থেকে যায় অভিনীত নাটকগুলো নিয়ে এ অভিনেত্রী নিজে কতটা সন্তুষ্ট?
তিশা বলেন, ‘একজন শিল্পী তার কাজ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট কখনই হতে পারেন না, সবসময় চান অতীতের চেয়ে আরও ভালো কাজ করতে। আমিও চাই। একজন অভিনেত্রী হয়ে নিজের সর্বোচ্চ মেধা দিতে চাই সবসময়। এটা সত্যি যে, টিভি পর্দায় নিয়মিত কাজ করেছি। যতটা সম্ভব ভালো গল্পের নাটকে কাজের চেষ্টা করেছি, এখনও করছি। কারণ আমাদের দেশে গল্পনির্ভর নাটকের দর্শক বেশি। এটা বুঝেছি ইউটিউবে নাটকগুলোর ভিউয়ের পাশাপাশি দর্শকের মতামত থেকে। একজন অভিনয়শিল্পীর কাছে দর্শকের ভালোবাসা আর ভালোলাগাই হলো সবচেয়ে বেশি সফলতা।’ টিভি পর্দায় আফরান নিশো ও অপূর্বর সঙ্গে বেশি দেখা যায় তানজিন তিশাকে। এ দুই অভিনেতার সঙ্গে তিশার অভিনয়ের রসায়ন দর্শকও উপভোগ করছে। তবে কি তিশারও রয়েছে পছন্দের অভিনেতা, যার সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করতে পছন্দ করেন তিনি। বিষয়টি এ রকম নয় বলে জানালেন তিশা। বলেন, ‘আমি সবার সঙ্গে অভিনয় করি।
নিজস্ব কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, অমুক অভিনেতার সঙ্গেই অভিনয় করতে হবে। তা ছাড়া সহশিল্পী ঠিক করেন নির্মাতারা। কোনো নাটক বা টেলিছবিতে অভিনয়ের আগে আমি শুধু গল্প আর চরিত্রটিই দেখি। চরিত্র পছন্দ হলেই আমি অভিনয়ে রাজি হই, এ ছাড়া নয়। দর্শক পছন্দের কথা মাথায় রেখে হয়তো আমার বিপরীতে আফরান নিশো ও অপূর্বকে নির্বাচন করেন নির্মাতারা।’
বর্তমানে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিকসহ বেশ কয়েকটি খণ্ড নাটকে কাজ করছেন এ অভিনেত্রী। মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ও টিভি পর্দায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও কবে তিশাকে দেখা যাবে সিনেমায়, এমন প্রশ্ন অনেক দর্শকের। এমন প্রশ্ন শুনে মিষ্টি হেসে উঠেন তিনি। বললেন, ‘সিনেমা নিয়ে আমি অনেকবার বলেছি। সিনেমা আমি করব না তা নয়। সিনেমা করতে চাই। তবে কোনো একটা গল্প পড়ে মনে হতে হবে- ‘দিস ইজ মাইলস্টোন, আই ক্যান ডু দিস প্রজেক্ট’।
সবকিছু মিলিয়ে যদি মনে হয় যে ভালো প্রডাকশন, যেটার যোগ্য আমি বা যে কাজটা আমার জন্য সেটা অবশ্যই করব।’ কথার পিঠে কথা বাড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে আমি গল্পকে প্রেজেন্ট করতে পারব, পারফর্ম করতে পারব তেমন হলে সিনেমায় আপত্তি নেই। শুধু বলার জন্য সিনেমা করলাম, নাচ-গান করলাম এমন কিছু নয়। নাচ-গান তো করেছি। কিন্তু যে ছবিটা আমাকে আনন্দ দেবে, নিজেকে মেলে ধরতে পারব সেটাই করতে চাই।’
গেল কয়েক বছর ধরেই বিশেষ দিবসগুলোয় টিভি চ্যানেল খুললেই তানজিন তিশাকে দেখা যায়। এতে অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করেন, ঘুরেফিরে ছোটপর্দায় একই মুখ। বিষয়টি তিশা কীভাবে দেখেন। তার উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘হতে পারে অনেকে বিরক্ত হন। কিন্তু এত কাজ আমি কেন করছি? সেটা আমার ইচ্ছেতে? দর্শকের চাহিদা, চ্যানেলের চাহিদা। এখন অ্যাপের যুগ চলছে। অ্যাপে যারা কনটেন্ট বানাচ্ছেন তারা এই চেনা মুখগুলো চাইছেন। আসলে কাজ করা হয় দর্শকের চাহিদাতেই।’
সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক নাটকে তেমন একটা দেখা যায় না তিশাকে। ধারাবাহিক নাটকে অধারাবাহিকভাবে কাজ করার কারণও জানালেন তিনি। বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার গ্রাফটা দেখলে বুঝতে পারবেন। শুরু থেকেই আমি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় এড়িয়ে চলেছি। তার পরও কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি।
সেগুলো করতে গিয়ে বুঝেছি, ধারাবাহিক নাটকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর এখন এক ঘণ্টার নাটকের জন্য বেশি ব্যস্ত হওয়ায় ধারাবাহিকের জন্য যে সময়টা দেওয়া প্রয়োজন, তা দিতে পারব না বলেই ঢালাওভাবে অভিনয় করছি না।’
তিশার অবসরে সময় কাটে পরিবারের লোকজন ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে এবং সিনেমা দেখে। রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়াতে দারুণ পছন্দ করেন তিশা। তাই তো সময় পেলেই ঢাকার আনাচে-কানাচে রিকশায় সওয়ার হয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশ ভ্রমণের প্রতি রয়েছে তার আলাদা টান। তার পছন্দের স্থানগুলোর একটি মালদ্বীপ। এরপর পছন্দের তালিকায় আছে কক্সবাজার। যেখানে একাধিকবার গিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
মজার বিষয়, তার পছন্দের তালিকায় সর্ব প্রথমে আছে তার নিজ ঘর। তিশা বলেন, ‘আমার বাসা, আমার রুম সবচেয়ে পছন্দের একটি স্থান। যেখানে আমি আমার পছন্দের মানুষগুলোর সঙ্গে থাকি। তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি আমার রুম, নিজের মতো করে সাজিয়ে রাখি। কাজ শেষে ঘরে ফেরার পর সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।’