দর্পণ ডেস্ক :
উত্তর কোরিয়ার প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থাপনা বন্ধ করে দিতে সম্মত হয়েছেন দেশটির নেতা কিম জং উন। শুধু তাই নয়, কোরীয় যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো সিউল সফরেও সম্মত হয়েছেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে উনের সঙ্গে বৈঠক শেষে গত বুধবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া ‘একরকম নিরস্ত্রীকরণেই সম্মত হয়েছে’। এই পরিস্থিতিকে তিনি কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক শান্তি অর্জনের পথে ‘বড় ধরনের বাধা অতিক্রম’ বলে মন্তব্য করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের এবারের পিয়ংইয়ং সফর এবং উনের সঙ্গে সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ। যদিও গত জুনে সিঙ্গাপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উনের ঐতিহাসিক বৈঠকেও নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে এ বিষয়ে আলোচনা আর এগোয়নি। ওই আলোচনাকে গতিশীল করতেই মুন জায়ে ইন এবার পিয়ংইয়ং সফর করেছেন। দুই দিনের এই সফর শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার।
তবে শুধু মুনই নন, উনও পাল্টা সফরে সিউলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মুন। এ বছর শেষ হওয়ার আগেই সে সফর হওয়ার কথা। দুই কোরিয়ার পরিকল্পনা অবশ্য এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০৩২ সালে একসঙ্গে অলিম্পিক গেমস আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। আর দুই কোরিয়ার নাগরিকদের পুনর্মিলনীর আয়োজনটাও আগের চেয়ে ঘন ঘন করা হবে।
নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে পিয়ংইয়ং তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। মুন জানান, উন তাদের প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ক্ষেত্র টংচাং-রি বন্ধ করে দিতে সম্মত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এর কার্যক্রম বন্ধ করা হবে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সামনে। নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে একেকটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার টংচাং-রি প্রধান স্যাটেলাইট উক্ষেপক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পরীক্ষাও এখানেই চালানো হয়েছে। এছাড়া মুন জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া তাদের ইয়ংবিয়নের পারমাণু ক্ষেত্রও বন্ধ করে দিতে সম্মত হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকেও যথাযথ সাড়া দিতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। গত জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর উত্তর কোরিয়া পরমাণু পরীক্ষা ক্ষেত্র পুঙ্গি-রি বন্ধ করে দেয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট সাময়িকীর সম্পাদক অঙ্কিত পান্ডা বলেন, ‘এবারের বৈঠক থেকে যা পাওয়া গেছে তা মুন জায়ে ইনের জন্য বড় ধরনের বিজয়। তিনি নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে কিম জং উনের কাছ থেকে বড় বড় কয়েকটি শিরোনাম বের করে আনতে পেরেছেন।’
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং উত্তর কোরিয়ার সেনাপ্রধান সীমান্ত বরাবর একটি বাফার জোন তৈরি এবং সামরিক উত্তেজনা কমাতে একটি চুক্তিতে সই করেছেন।
উন-মুনের এ বৈঠকের পর এ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এক টুইটে তিনি বলেন, ‘উন পরমাণু পরিদর্শকদের পরিদর্শনে অনুমতি দিয়েছেন, যা চূড়ান্ত আলোচনার বিষয়।’ পুরো সম্মেলনকেই ‘অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, সিএনএন।