অনলাইন ডেস্ক : চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার দশ বর্গফুটের একটি লোহার খাঁচা। এতে বন্দি একটি ভয়ঙ্কর কুকুর। আদালতের নির্দেশে দুই বছর ধরে বন্দি জীবন কাটছে এ প্রাণীটির। দেহের রঙ কালো ও মেহগনি। ওজন ৫০ কেজি। তাকে দৈনিক খেতে দিতে হয় তিন থেকে চার কেজি মাংস। জার্মানির এ কুকুরটি এতটাই হিংস্র যে, একজন মানুষকে হত্যা করে সাবাড় করতে তার সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা! বিশ্বের দ্বিতীয় হিংস্র প্রজাতির এ কুকুরের নাম ‘রটওয়েলার’। এই কুকুরটিকে লেলিয়ে হত্যা করা হয় চট্টগ্রামের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের এ লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রি মজুমদার হিমুকে। দেশে এই প্রথম কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি হিসেবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একটি কুকুরকে বন্দি রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট থেকে চিড়িয়াখানায় কাটছে তার বন্দিজীবন। চট্টগ্রাম জেলা চিড়িয়াখানাখানার পশু চিকিৎসক ডা. শুভ বলেন, ‘আলোচিত হিমু হত্যা মামলায় আদালত পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ও অভিযুক্ত হিসেবে রটওয়েলার কুকুরকে চিড়িয়াখানায় বন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত হিংস্র এ কুকুরটি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার হেফাজতে বন্দি অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘হিমু হত্যা মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা আদালতে পাঁচ আসামির ফাঁসির রায় হয়। তারা হলো- শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, রিয়াদের তিন বন্ধু শাহাদাৎ হোসাইন সাজু, মাহাবুব আলী খান ড্যানি ও জাহিদুল ইসলাম শাওন। রায় ঘোষণার সময় শাহ সেলিম টিপু, শাহাদাৎ হোসাইন সাজু ও মাহাবুব আলী খান ড্যানি আদালতে থাকলেও বাকি দুই আসামি পলাতক। তিনজন কারাগারে রয়েছে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আপিলের রায় না আসা পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে ও কুকুরটিকে চিড়িয়াখানায় বন্দি থাকবে হবে।’
চিড়িয়াখানা গিয়ে দেখা গেছে, প্রবেশপথের ডান পাশে চিড়িয়াখানার অফিস কার্যালয়। তার পেছনে একটি লোহার খাঁচা। সেখানেই বন্দি আছে ‘রটওয়েলার’ কুকুরটি। হিমুকে এই হিংস্র কুকুরটি কামড়িয়ে মেরেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে আদালতে। বিশাল আকৃতির কুকুরটির কাছে যেতেই কিছুক্ষণ পরপরই ঘেউ ঘেউ করে হুঙ্কার দেয়। দর্শনার্থীদের তথ্য জানার সুবিধার্থে বাঘ কিংবা সিংহের মতোই কুকুরটির পরিচিতি ফলকে তুলে ধরা হয়েছে এই প্রাণীটি দিয়ে সংঘটিত অপরাধের বণর্না।
পশু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সচরাচর রটওয়েলার কুকুর দেখা যায় না। এটির পেছনে যে পরিমাণ খরচ হয় তা সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই বিত্তশালী ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ রটওয়েলার কুকুর লালন-পালন করতে পারে না। সাধারণ এটি রট ও রটি নামে পরিচিত। এর দেহের বর্ণ কালো ও মেহগনি। একটি পুরুষ রটওয়েলারের উচ্চতা ৬২ থেকে ৬৯ সেন্টিমিটার। আর স্ত্রী রটওয়েলার হয়ে থাকে ৫৬ থেকে ৬৩ সেন্টিমিটার। চিড়িয়াখানায় বন্দি থাকা হিমুর খুনি কুকুরটিকে গরু, ছাগল ও মুরগির মাংস খেতে দেওয়া হয়। দৈনিক তিন থেকে চার কেজি মাংস লাগে তার। সঙ্গে দেওয়া হয় তিন লিটার পানি। খুবই শক্তিশালী ও দৃঢ় স্বভাবের কুকুর এটি।
২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় হিমাদ্রি মজুমদার হিমুকে নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির চারতলায় এ হিংস্র কুকুর লেলিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার ২৬ দিন পর ২৩ মে ঢাকার ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হিমু। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট হিমু হত্যা মামলার রায় দেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালত। আদালতের কাছে রটওয়েলার কুকুর লেলিয়ে দিয়ে হিমুকে হত্যা করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।