রাজা ও জমিদারদের শাসন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বহুবছর আগেই, কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তাদের রেখে যাওয়া কিছু নিদর্শন
ঘুরতে ভালো লাগে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। যদি ভ্রমণের স্থান হয়, কয়েকশ’ বছর পুরোনো জমিদার বাড়ি, তবেতো কথাই নেই।
রাজা ও জমিদারদের শাসন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বহুবছর আগেই। কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের নিদর্শনগুলো।এমনই একটি জমিদার বাড়ি হচ্ছে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি।
গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি কিশোরগঞ্জের একটি বিখ্যাত জমিদার বাড়ি। এই অনুপম স্থাপত্যকর্ম কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি মানববাবুর বাড়ি নামেও পরিচিত। মানব বাবু নামটি জমিদার বংশের বর্তমান উত্তরাধিকারী মানবকেন্দ্র চক্রবর্তীর নামানুসারে পরিচিত। অতিপ্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ১৮শ’ শতকের শেষের দিকে। দীননাথ চক্রবর্তীর হাত ধরে এর যাত্রা শুরু হয়। তিনি ইংরেজদের কাছ থেকে হোসেনশাহী পরগনার একটি অংশ কিনে এই জমিদার বাড়ি এবং এর জমিদারি শুরু করেন। কিন্তু ইতিহাস থেকে জানা যায় বাবু অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী “পত্তনি” সুত্রে আঠার বাড়ির জমিদার জ্ঞানদা সুন্দরী চৌধুরাণীর কাছ থেকে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি জমিদারিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
যা দেখতে পাবেন এখানেঃ
প্রাচীনকালের এই কারুকার্যময় গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে জমিদারদের অনেক নিদর্শন। গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারদের ব্যবহৃত কাছারি ঘর রয়েছে। অতি পুরোনো এইসব কাছারি ঘরগুলো এখন আর আগেরমতো নেই। কিন্তু তারপরও হাজার হাজার মানুষ দূর দুরান্ত থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। এছাড়া জমিদার বাড়িটিতে পুরোনো দিনের জমিদারদের নহবতখানাগুলো এখনো রয়েছে। প্রাচীন এই বাড়ির কিছু অংশ ভেংগে গেলেও এখনো এই দর্শনীয় নিদর্শনগুলো দেখতে পাবেন। সুদর্শন এই জমিদার বাড়িটিতে গেলে আপনি জমিদার এবং তাদের পরিবারদের ব্যবহৃত মন্দির দেখতে পাবেন। এছাড়াও এই জমিদার বাড়িটিতে আছে জমিদারদের ব্যবহৃত পুকুর ও সবুজে ঘেরা বিশাল আঙ্গিনা। প্রাচীন এই বাড়িটির কাছারি ঘরগুলো ছাড়া বাকি সকল স্থাপনাই আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। তারপরও প্রতিবছর দূর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ এই জমিদার বাড়ি দেখতে আসেন।
কীভাবে যাবেন
বাসে কিংবা ট্রেনে করেই ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন। মহাখালী বা গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়া যেকোনো করে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া ২২০-২৫০ টাকা হবে। এই বাস কিশোরগঞ্জের গাইটাল বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিবে। তারপর আবার বাসে করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের কাছে বটতলা মোড়ে যেতে হবে। এই মোড়ে আসতে বাস ভাড়া নিবে ৫ টাকা করে। তাছাড়া ২০-২৫ টাকা ভাড়ায় সিএনজি (C.N.G) অথবা ইজিবাইক দিয়ে একেবারেই চলে যেতে পারেন জমিদার বাড়িতে। এছাড়া রিজার্ভও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া হবে ২০০-২৫০ টাকা।
ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর অথবা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে পারেন। এগারো সিন্ধু নামক ট্রেনে সকাল ৭.৩০ মিনিটে উঠলে ১১ টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন কিশোরগঞ্জ। সেক্ষেত্রে ভাড়া হবে ১২০ থেকে ২২০ টাকা। স্টেশনে নামার পর ইজিবাইকে করে কেবলমাত্র ১০ থেকে ১৫ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন জমিদার বাড়িতে।