অনলাইন ডেস্ক : গত শুক্রবার পায়রা উড়িয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : বাংলার চোখ
কমিটি ঘোষণা ছাড়াই শেষ হয়েছে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করতে ব্যর্থ হয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার নামের তালিকা গণভবনে দিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
কমিটি ঘোষণায় যত দেরি হচ্ছে, ততো বেশি অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় থাকা নেতাদের নামে।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগের কমিটি নিজেদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের অনুসারীদের দিয়ে এসব করছেন। নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই নোংরামিতে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। তিনি সোহাগ-জাকিরকে বলেছেন, ‘তোমরা কাউন্সিলরদের বাড়ি চলে যেতে বলো। কমিটি আমি ঘোষণা করব।’
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর থেকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের আলোচিত প্রার্থীদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ছড়ানো শুরু হয়েছে ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘেটে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সহসভাপতি আদিত্য নন্দীর নামে ছড়ানো হচ্ছে, তিনি পরীক্ষায় ফেল করেছেন। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের ছেলে আদিত্য ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.০৬ পেয়ে স্নাতক পাস করেছেন। বর্তমানে একই বিভাগের স্নাতকোত্তর বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি।
আদিত্য ২০০৫ ও ২০০৭ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এরপর ২০০৮ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে সক্রিয়। ১/১১ এর সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারামুক্তি আন্দোলনে প্রথম বর্ষে পড়েও সক্রিয় ছিলেন আদিত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী আদিত্য।
অপরদিকে ছাত্রলীগের আরেক প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে, তিনি বিবাহিত এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরিবারের সন্তান। যে মেয়ের সঙ্গে শোভনের বিয়ের কথা ছড়ানো হচ্ছে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,তার মেয়ে অবিবাহিত, শোভনের সঙ্গে কোনো সর্ম্পক নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শোভনের দাদা শামসুল হক চৌধুরী ছিলেন ১৯৭০ সালের গণপরিষদের সদস্য। এরপর ১৯৭১ ও ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুড়িগ্রামের সংসদ সদস্য ছিলেন। কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি। শোভনের বাবা নুরুন্নবী চৌধুরী বর্তমানে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শোভন এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
তবে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চারও হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কিছু নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক নাসিম আল মমিন রূপক লিখেছেন, ‘শিবিরকে ছাত্রলীগ বানাও। যখন সে পথ বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন আসল ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করে দাও। এটাই তাদের রাজনীতি!’
ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী লিখেছেন, ‘বিভ্রান্ত মানুষরাই বিভ্রান্তি, গুজব ছড়ায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, একটি কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ছেলেমেয়েদের নামে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তদারকিতে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হলে দীর্ঘদিন ধরে তারা যেভাবে ছাত্রলীগকে পরিচালিত করে এসেছে সেভাবে আর পারবে না। ছাত্রলীগ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করতে এই নোংরামিগুলো করছে। প্রকারান্তরে এটি বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে এক ধরনের ধৃষ্টতাও বটে।
Source: dainikamadershomoy