অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা-১০ (ধানমণ্ডি-কলাবাগান-হাজারীবাগ-নিউমার্কেট) আসনে বর্তমান এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন ঢাকা-৯ ভেঙে ঢাকা-১২ নামে আসনটি গঠন করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আবারও সংসদীয় এলাকার কিছুটা রদবদল করে ঢাকা-১০ নামে আসনটি পুনর্গঠন করা হয়।

গত দুই নির্বাচনেই এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হয়েছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এর মধ্যে ২০০৮-এর নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি (তৎকালীন ঢাকা-১২ আসন) নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালের দশম নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত হন শেখ পরিবারের অন্যতম এই উত্তরাধিকার।

ধানমণ্ডি রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। সমাজের শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির বসবাস এ এলাকায়। রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব বাসভবন এবং রাজনৈতিক কার্যালয়। অন্যদিকে, হাজারীবাগ এলাকায় স্থানীয়সহ রয়েছে নানা শ্রেণি ও আয়ের মানুষের আবাসস্থল, যার মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকের প্রাধান্য বেশি। এমন একটি আসনে কোনো দলেরই একচেটিয়া প্রভাব কখনও ছিল না। বিগত দিনে যে দলই এ আসন থেকে জয়ী হয়েছে, সে দলই সরকার গঠন ও ক্ষমতায় গেছে।

এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে শেখ ফজলে নূর তাপস ছাড়া আওয়ামী লীগে অন্য কারও নাম আলোচনায় না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।  পিতৃমাতৃহীন তাপস রাজনীতিতে আসার পর তাকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ এলাকার মানুষ। এ কারণে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাঠে নামলেও বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন তিনি।

সুদর্শন এই এমপি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তবে রাজনীতির পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী হিসেবে সুপরিচিত। গত বছরের মে মাসে বিবদমান আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদকে একীভূত করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নামে গঠনকালে তাপস নতুন সংগঠনের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। তরুণ এই আইনজীবী নেতা এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি নতুন সংগঠনের সম্মেলন প্রস্তুতি নিয়ে অনেকটা ব্যস্ত রয়েছেন।

এলাকায় সৎ, বিচক্ষণ, সজ্জন ও সদালাপী এবং অনেকটা ভিন্ন ধাঁচের রাজনীতিবিদ হিসেবে এলাকায় তাপসের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। দলীয় কর্মকাণ্ড সুসংগঠিত করার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সেবামূলক কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন তিনি। টানা দুই মেয়াদে এমপি থাকলেও তাকে নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে কোনো বিতর্ক ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে হওয়ায় তার প্রতি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিশেষ সহানুভূতি রয়েছে। তিনিও সুখে-দুঃখে সব সময়ই দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থাকেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে বেশ স্নেহ করেন।

আবার এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাপসের প্রতি এক ধরনের সমর্থন রয়েছে এলাকার মানুষেরও। দুই মেয়াদের এমপি হিসেবে তিনি নির্বাচনী এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক কাজ করেছেন। এ ছাড়া তার সময়ে দৃশ্যমান কোনো দলীয় কোন্দল না থাকায় আগামী নির্বাচনে আবারও প্রার্থী করা হলে তিনি আসনটি আওয়ামী লীগের পক্ষেই ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন তাপস সমর্থকরা।

এসব বিষয়ে অনেকটাই প্রচারবিমুখ ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সমকালের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল নিশ্চিত করেছেন, ঢাকা-১০ আসনে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দলের একক সম্ভাব্য প্রার্থী। ২০০৮ সালে এমপি হয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মন জয় করতে সমর্থ হয়েছেন তাপস। গত নির্বাচনে জিতেও একই ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থী হবেন।

ধানমণ্ডি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবলা বলেছেন, এ আসনের সব থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সব নেতাকর্মীও আগামী নির্বাচনের একক প্রার্থী হিসেবে তাপসকে সমর্থন করছেন। বিএনপির অংশগ্রহণের জোরালো সম্ভাবনা থাকায় এবারের নির্বাচন অনেকটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তারপরও দল-মত নির্বিশেষে সবাই তাপসকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে শতভাগ আশাবাদী তারা।

তিনি বলেন, গত দুই মেয়াদের এমপি ব্যারিস্টার তাপস এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি যেভাবে এলাকার রাস্তাঘাটের সংস্কার, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তি নিরসন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূর করেছেন- তাতে এ আসনে তার বিকল্পও কেউ নেই। এলাকাবাসী মনে করে, তাকে নির্বাচিত করে শান্তিতে আছেন তারা। আগামীতে নির্বাচিত করলে শান্তিতেই থাকবেন।