আজ শনিবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিভাগ পরিবর্তনের এই ইউনিটে বেলায়েত শেখ বাণিজ্য বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করেছেন।
আগ্রহের কমতি না থাকলেও আর্থিক দুরবস্থা ও বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া থেকে ছিটকে গিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন বেলায়েত শেখ। বেলায়েত শেখের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবনে।
সাংবাদিকদের সামনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বেলায়েত বলেন, ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় আমার অংশগ্রহণ যেন একটি সমুদ্র পার হওয়ার সমান। আর আজকে আমার সঙ্গে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারা যেন নৌকা দিয়ে ছোট্ট একটা খাল পার হয়েছে। লেখাপড়ার জন্য ইচ্ছাশক্তি আগে থেকেই ছিল, চেষ্টা করেছি, এ পর্যন্ত এসেছি। আমি অসময়ে লেখাপড়ায় আসছি, পরবর্তী প্রজন্মকে বলব তারা যেন যথাসময়ে পরীক্ষা দিয়ে জীবন গড়তে পারে।
পরীক্ষা কেমন হলো এবং চান্স পেলে কোন বিভাগে পড়তে চান এমন প্রশ্নে বেলায়াত বলেন, পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালো দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার যে এত সুন্দর এটা প্রথমবার এসে দেখলাম। চান্স পেলে আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে চাই। আর চান্স না হলেও আমি আমার ইচ্ছাশক্তি দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি এটা বাকিদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমার ঢাবিতে চান্স না হলে রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, গুচ্ছতে ফর্ম তুলেছি সেখানে চেষ্টা করব। কোনো একটা জায়গায় আল্লাহ একটা সিট রেখেছে। আমি চেষ্টা করে যাবো বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
বাকি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি অসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছি। বাকি শিক্ষার্থীরা যেন পিতামাতা ও শিক্ষকদের সম্মান করে এবং সঠিক সময়ে পড়াশোনা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বেলায়েতের ছোট ছেলে মো. সাদেক শেখ জীবনও অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষা উপলক্ষে রাস্তায় যানজটের কথা ভেবে তারা শুক্রবার গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসে তার বাবার বন্ধুর বাসায় উঠেন দুজন। পরে একসঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রেও আসেনতারা। বাবার সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা শেখ স্বাধীন জীবন বলেন, আমার বাবা এই বয়সে এসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে এটা দেখে গর্ববোধ হচ্ছে। এই বয়সে আর কয়জনই বা পড়াশোনায় অটল থাকে। সবাই ভাবে শেষ বয়সে কিছু হবে না। আমার বড় ভাই বোনদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাও ছিলো না। তাদের ওপর অভিমান করে বাবা এই পদক্ষেপ নেন।
এসময় গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বেলায়েত তিনি এই বয়সে পরীক্ষা দেওয়ার সাহস করেছে এটা আমি এর আগে দেখি নাই। পড়ালেখায় বয়স কোনো বাঁধা না। উনি যে সাহস করেছে এটা দেখেই পরবর্তী প্রজন্ম অনুপ্রেরণা পাবে।
উল্লেখ্য, ‘ঘ’ ইউনিটে এ বছর ১ হাজার ৩৩৬টি আসনের বিপরীতে আবেদনকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ৪৫ জন। মোট ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষাটি বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে সাড়ে ১২টায় শেষ হয়।