ত্বকী হত্যার সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। মাঝে এতগুলো বছর চলে গেলেও এ ঘটনার বিচার হয়নি। এখন ত্বকী হত্যাকাণ্ড বিচারহীনতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ত্বকী একটি রাজনৈতিক হত্যা। ত্বকীর বাবার কর্মকাণ্ডের জেরেই এমন মেধাবী কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। এমন সম্ভাবনাময় কিশোরের হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিচার যতদিন এ দেশে হবে না, ততদিন দেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না। বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণেই ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুর মতো একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজন এ কথা বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকী কাউকে আঘাত করেনি, কারও প্রতি অন্যায় করেনি। তার পরও তাকে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এ রাষ্ট্র তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তার হত্যার বিচার করতে পারেনি। ত্বকীর মতো হত্যাকাণ্ডের শিকার যেন কাউকে হতে না হয়, সেজন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে। 

তিনি বলেন, যে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, এটাকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বলা হয়। আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে সাগর-রুনি হত্যার বিচার অসংখ্যবার পেছানো হলো, তনু হত্যা, মিতু হত্যার বিচার হলো না। পুরো দৃশ্যপটের এটা একটা অংশ। তদন্তকারী সংস্থাগুলো যে হত্যাকারীদের ধরতে পারে না তেমনটা নয়। ত্বকীর ব্যাপারে তো প্রতিবেদন তৈরি করেই ফেলেছিল। কোনো এক জায়গায় গিয়ে তারা বাধার মুখে পড়েছে।

সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ একটি ট্র্যাজিক অবস্থানে চলে গেছে। যে অন্যায়-অবিচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেগুলোই আজ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিচার যতদিন এ দেশে হবে না, ততদিন দেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, বিচার ব্যবস্থা কতটা নিয়ন্ত্রিত সেটা পিরোজপুরের বিচারককে বদলির বিষয়টি দেখলেই বোঝা যায়। সমাজকে রক্ষা করতে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই ত্বকীসহ সাগর-রুনি ও তনুর বিচারকার্য শেষ করতে বাধ্য করা হবে।

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান বলেন, ত্বকীর বিচারের জন্য আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে চেষ্টা করতে হবে। উচ্চ আদালতে যেতে হবে।

ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, আইনের ওপর আমাদের আর ভরসা নেই। বর্তমানে দেশে আইনের চেয়ে ব্যক্তির দাম বেশি।

আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ূয়া বলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আরও তৎপর হতে হবে।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এরপর ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা চারারগোপ এলাকার খালে তার লাশ পাওয়া যায়। ওই দিন রাতেই ত্বকীর বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। পরে ১৮ মার্চ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ত্বকীর বাবা।