নোবিপ্রবি’র টিএইচএম বিভাগের ব্যতিক্রমী প্রেজেন্টেশন

কালচারাল ট্যুরিজম কোর্সে বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতি ব্যতিক্রমী উপায়ে উপস্থাপন করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (টিএইচএম) বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রোববার বিভাগের শ্রেণীকক্ষে কালচারাল ট্যুরিজমের কোর্স টিচার প্রভাষক মো. নাজমুল হুদার তত্ত্বাবধানে বিভাগটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সাতটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অ্যারাবিয়ান, ওয়েস্টার্ন, তামিল, পিপল অব দ্য রেইনফরেস্ট (আফ্রিকান), উপজাতি, শিখ ও বাঙালি জাতির সংস্কৃতি উপস্থাপন করে।

নোবিপ্রবি’র টিএইচএম বিভাগের ব্যতিক্রমী প্রেজেন্টেশন

বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘দ্য পাইওনিয়ার্স’ গ্রুপ পোশাক, ভাষা এবং কালচারাল এক্টিভিটিসের মাধ্যমে তামিল সংস্কৃতিকে সবার সামনে তুলে ধরেছে গ্লোবাল পারস্পেক্টিভ অনুযায়ী। ‘মর্নিং স্টার’ গ্রুপ ‘কালচারাল ট্যুরিজম’ এর বিষয় হিসেবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরেছে। আজকাল বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে বাঙালিরা নিজেদের সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছে। তাই তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে নিজেদের হৃদয়ে লালিত করার এবং অন্যদের জানানোর চেষ্টা করে। বাংলাদেশের লোকজনের জীবনযাপন, পোশাক, খাদ্য ও সর্বোপরি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করে তারা।

‘দ্য গ্লোভট্রটার্স’ গ্রুপ বাংলাদেশের উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আচার, অনুষ্ঠান, পোশাক এবং খাদ্যাভ্যাস উপস্থাপন করে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আত্মসম্মান বৃদ্ধি করতে এমন উপস্থাপনা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আয়োজিত হওয়া উচিত এমনটাই মনে করেন তারা। ‘বোহেমিয়ান্স’ গ্রুপ ‘শিখ সংস্কৃতি’ উপস্থাপন করেছে। শিখদের ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় বিশ্বাস, উৎসব এবং দর্শনীয় স্থানগুলোকে তুলে ধরে তারা। এই গ্রুপ বিশ্বাস করে বৈচিত্র্যেই সৌন্দর্য্য নিহিত। এই ধরনের উপস্থাপনায় মানুষ নিজ সংস্কৃতির পাশাপাশি অন্য সংস্কৃতির প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণের পার্থক্য ডিঙ্গিয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হবে ‘মানুষ’ এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

গ্রুপ ‘সেভেন সাইটসার্স’ মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি অর্থাৎ অ্যারাবিয়ান সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। সাধারণত সবাই মুসলিম দেশগুলোকে তুলনামূলক কম বৈচিত্র্যময় মনে করেন। এই উপস্থাপনার মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানিয়েছেন সবাইকে। ‘এক্সট্রিম রাইডার্স’ গ্রুপ বন্য মানুষদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম তু্লে ধরে। এছাড়া, ওয়েস্টার্ন গ্রুপও তাদের জীবনযাত্রা উপস্থাপন করেছে।

নোবিপ্রবি’র টিএইচএম বিভাগের ব্যতিক্রমী প্রেজেন্টেশন

গ্রুপ ‘এক্সট্রিম রাইডার্স’র লিডার রূপন শীল বলেন, কালচারাল ট্যুরিজম কোর্স টিচার আমাদের কাজ দিয়েছেন সংস্কৃতি নিয়ে কিছু করার জন্যে। অতঃপর ক্লাসের বন্ধুরা যখন সভ্য-আধুনিক সংস্কৃতি এক এক করে নিতে লাগল তখন আমরা ঠিক করতে পারছিলাম না কাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা যায়। বর্তমানে মহামারিতে রুপ নেওয়া করোনা ভাইরাসে ভীত পুরো পৃথিবী। বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এই ভাইরাস বিভিন্ন বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তখন আমার মনে পড়ল বনে তো শুধু উদ্ভিদ আর নানা জন্তু নয়; একটি মানব জাতিরও আবাস। তারা নিরাপদ তো! তাই আমরা বন মানুষদের জীবন-ধারণ, ভাষা, সংস্কৃতি ও নানা বিষয় আমাদের ‘এক্সট্রিম রাইডার্স’ গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে তু্লে ধরেছি।

এ ব্যাপারে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক মো. নাজমুল হুদা বলেন, বিভিন্ন জাতির কালচার রিপ্রেজেন্ট করার জন্য আমি আমার শিক্ষার্থীদের একটি প্রেজেন্টেশন টপিক দেই। তখন শিক্ষার্থীরা গ্রুপভিত্তিক স্বেচ্ছায় পছন্দ করে একটি করে টপিক বেছে নেয়। কেউ আফ্রিকান কালচার, কেউ অ্যারাবিয়ান, কেউ ওয়েস্টার্ন কালচার বেছে নেয়। অতঃপর রবিবার ক্লাসে প্রত্যেক গ্রুপ ইউনিকভাবে বিভিন্ন জাতির কালচারকে রিপ্রেজেন্ট করে তারা। যেহেতু আমাদের কোর্সটি কালচারাল ট্যুরিজম তাই স্টুডেন্টদের ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। আমি আমার সহকর্মীদের উৎসাহও পেয়েছি। তারা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ইউনিক প্রেজেন্টেশন প্রতিটি কোর্সেই নেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের পারফর্মেন্সে আমি মুগ্ধ, তারা ভবিষ্যৎ ট্যুরিজম এক্সপার্ট হিসেবে একেকজন বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করি।