বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতির সঠিক বিচার ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি) থেকে গণহারে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির কার্যকরী পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

পদত্যাগকারীরা হলেন- সাধারণ সম্পাদক আবু সরকার, কার্যকরী সদস্য প্রণব বড়ুয়া, জাহিদ হাসান স্বপন, সহকারী কোষাধক্ষ তিলক কর, যুগ্ম সম্পাদক মো. রশিদ হারুন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাসনাত সানি, প্রেস সেক্রেটারি আকাশ রইস। বাগডিসির কোষাধ্যক্ষ নুসরাত জাহান এবং নির্বাহী সদস্য পিংকি প্যাটও পদত্যাগ করেছেন।

বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসির অন্যতম পুরনো সংগঠনটির সদ্য পদত্যাগকারী সাধারণ সম্পাদক আবু সরকার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২১ ডিসেম্বর বাগডিসির বিজয় দিবস পালন অনুষ্ঠানে সংগঠনের অপর সহ-সভাপতি নেসার আহমেদ অনুষ্ঠানের নিয়ম ভেঙে বিতর্কিত অডিও রেকর্ড বাজিয়ে তৎকালীন সামরিক কর্মকর্তা জিয়াকে ১৯৭১ সালের প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে প্রচার করেন। বিষয়টি মিথ্যা, আজগুবি ও ভিত্তিহীন যা অনুষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত কোনো অংশেই ছিল না। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সংগঠনের সহকারী সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুমনকে শব্দ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নেসার আহমেদ সুমনকে বিতর্কিত অডিও রেকর্ডটি বাজাতে অনুরোধ করলে প্রথমে সুমন তা বাজাতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তার উপর চাপ প্রয়োগ করে ও ভীতি প্রদর্শন করে তা বাজাতে বাধ্য করেন (সুমন তার ফেসবুকে তা প্রকাশ করেছেন অনুষ্ঠানের পরদিন)। নেসার আহমেদ সঠিক ও মূল অডিওটি অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে জোরপুর্বকভাবে সরিয়ে তার মনগড়া  ইতিহাস বিকৃতির অডিওটি বাজিয়ে দেন যা তিনি গোপনে ফ্লাশড্রাইভে নিয়ে এসেছিলেন। অডিওটি বাজানোর পরে সবাই বুঝতে পারে যে নেসার আহমেদই কৌশলে এমন বিকৃত রুচির কাজটি করেছেন।

তিনি আরো বলেন, বাগডিসির ওই হীন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সে দিন সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ক্ষুব্ধ দর্শকরা তীব্র প্রতিবাদ জানায় ও মারমুখী হয়ে উঠলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে তিনি নিজে মাইক্রোফোনে এমন অনাকাক্ষিত ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এরপর সঠিক অডিও রেকর্ডটি বাজিয়ে অনুষ্ঠান পুণরায় শুরু করেন। পরদিন বাগডিসির জরুরি বোর্ড সভায় ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানানো হয় এবং অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ নেসার আহমেদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে মতামত দেয়। কিন্তু  বাগডিসির কিছু সিনিয়র নেতা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি শুরু করেন এবং ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এসব সভায় নেসার আহমেদ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তিনি যে কাজ করেছেন তা সঠিক বলে দাবি করেন। এমতাবস্থায় অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ নেসার আহমেদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে অনড় থাকেন। বাগডিসির এই স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি অশ্রদ্ধা ও ইতিহাস বিকৃতিকারীর প্রতি বাগডিসির কতিপয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে  তারা একযোগে পদত্যাগ করেন বলে তিনি জানান।

যোগাযোগ করা হলে সংগঠনটির সভাপতি করিম সালাহউদ্দিন বলেন, নেসার আহমেদ জরুরি সভায় তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও তারা পদত্যাগ করলে সংগঠনের কিছুই বলার নেই। শিগগরিই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনের অবস্থান জানাবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইন্ক্ (বাই) থেকে নাম পরিবর্তন করে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে বাগডিসি’র যাত্রা শুরু হয়। জন্মলগ্ন থেকে এ সংগঠনটি বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতি বছর বিভিন্ন জাতীয় দিবস অত্যান্ত ঝাঁকজমকপূর্ণ ও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে আসছে।