বাংলা অভিধান

বাংলা ভাষার নতুন শব্দ প্রয়োগের বিষয়টি সাধারণ মানুষকে যেমন প্রভাবিত করে, তেমনি প্রভাবিত করে লেখক, অনুবাদক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ নানান মহলকে

বাংলা একাডেমিতে বাংলা ভাষা নিয়ে যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, তেমনি কোনো শব্দ বা বানান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এখান থেকেই আসে। মূলত বাংলা ভাষার গবেষণা বা নতুন কিছুর অনুমোদন এখান থেকেই হয়ে থাকে। আর অন্য যে কাজটি করে বাংলা একাডেমি, তাহলো অভিধানে নতুন শব্দ যোগ করা।

বাংলা একাডেমি যখন নতুন কোনো শব্দ অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করে, তখন কোন কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কাজটি করেন তারা?

বাংলা একাডেমির একটি সম্পাদক পর্ষদ আছে যাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি নতুন শব্দকে অভিধানে স্থান দেওয়া হয়।

যারা শব্দ সম্পর্কে, ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে, ব্যবহার সম্পর্কে ও প্রয়োজন সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন, তাদের নিয়ে একাডেমির একটি পর্ষদ আছে। তারা যখন বিবেচনা করে যে এই শব্দটি বাংলাদেশে বাংলা একাডেমির বাংলা অভিধানে থাকা দরকার, তখন সেই শব্দটি আনা হয়।

বাংলা একেডেমি বলছে, এভাবে গত একদশকে প্রায় ২,০০০ শব্দ অভিধানে যোগ করা হয়েছে। তবে এসব শব্দের তালিকা দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। 

একাডেমির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তিগত বেশ কিছু শব্দ নতুন করে অভিধানে যোগ হয়েছে। নতুন শব্দ যখন অভিধানে যোগ হয়, তখন অনেকেই তা জানতে পারেন না।

এপ্রসঙ্গে একাডেমির মহাপরিচালক সিরাজী বলেন, বিদেশে এই জানানোর চর্চা থাকলেও রেওয়াজটা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। 

তিনি বলেন, “সম্পাদকমণ্ডলী যদি মনে করে তাহলে এই সংস্করণে এই শব্দগুলো নতুন ভুক্তি হয়েছে তাহলে তারা প্রেসের মাধ্যমে, প্রেস রিলিজ দিয়ে বা নোটিফিকেশন দিয়ে জানাতে পারে। এই রেওয়াজটি আমাদের এখানে নেই। তবে আমরা মনে করি এটা ভবিষ্যতে অবশ্যই কর্তব্য।”

বাংলা ভাষার নতুন শব্দ প্রয়োগের বিষয়টা সাধারণ মানুষকে যেমন প্রভাবিত করে, তেমনি প্রভাবিত করে লেখক, অনুবাদক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ নানা মহলকে। নতুন শব্দগুলোর ব্যাপারে মানুষকে জানালে ভালো। তবে তিনি মনে করেন, শব্দগুলো সম্পর্কে মানুষ আগেই একটা ধারণা পেয়ে যায়।

নতুন শব্দ যোগ করার ক্ষেত্রে প্রচারণার যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সেবিষয়ে একমত প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক মেহের নিগার। এই প্রচারণার জন্য তিনি একাধিক উপায়ের কথাও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “নতুন যে শব্দগুলো সংযোজিত হচ্ছে, সেগুলো বইমেলাকে কেন্দ্র করে একটা পুস্তিকা বের হতে পারে যে এই বছর এই শব্দ যোগ হয়েছে। এখানে সচেতন পাঠকদের মাধ্যমে হাতে হাতে চলে যেতে পারে। আরেকটা হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে।”

“যখন বিদেশি ভাষায় একটা নতুন শব্দ যোগ হয়, তখন তারা ব্যাপক প্রচার চালায়। সেখানে ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণগুলো থাকে, বানানটা কেমন হবে, উচ্চারণ কেমন হবে। বাংলা শব্দের ক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে সেটা করা যেতে পারে।”

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলা একাডেমি যেহেতু বাংলা ভাষার তত্ত্বাবধানে আছে, সেহেতু বাংলা ভাষায় প্রমিত রীতির মধ্যে কোন কোন নতুন শব্দ সংযোজিত হবে, সেগুলোর ব্যাপক প্রচার ও প্রসারটা তাদেরই করা প্রয়োজন।