এক আলাপচারিতায় ফারজানা ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমার এখন ৬০ এর অধিক বয়স। পৃথিবী ছেড়ে যাবার কথা ভেবে, এখন আমি জীবনের বোঝা কমাতে ব্যস্ত। অথচ আমাকে এখন বইতে হচ্ছে দুর্নীতির কলংকের বোঝা। জাহাঙ্গীরনগর আমাকে চিনল না’
আমি সচরাচর ইতিবাচক কথা উল্লেখ করে লিখতে পছন্দ করি। কিন্ত আজ বোধ হয় কষ্টের কথা নিয়ে শুরু করতে হবে। গতকাল ছেলেকে জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে দিয়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে বসে যন্ত্রস্থ গ্রন্থের খসড়া দেখছিলাম। ভবনের একজন শ্রমিক এসে জিজ্ঞেস করলো, আপা আপনি কি চাকুরি করেন? আমি বললাম, শিক্ষকতা করি। সে বলল কোথায়? আমি বললাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সে শুনেই বলল, বাপরে বাপ, আপনারা সারাদিন গোলমাল করেন। আমি বললাম, আপনি জানলেন কিভাবে? সে বলল, কেন পত্রিকায় টেলিভিশনে আপনাদের নিয়েই আলোচনা সারাদিন। এ কথা শোনার পর থেকে বিষন্ন হয়ে যায় মন। কোনোভাবেই মন আর ভালো হয় না। একজন প্রান্তিক মানুষ, তিনিও জানেন আমার প্রিয় প্রাঙ্গন অসুস্থ?
বাসায় ফিরে মুঠোফোনে কল রিসিভ করলাম চ্যানেল আই থেকে। আমাকে জানানো হলো জাহাঙ্গীরনগর নিয়ে কথা বলতে হবে। আমি রাজী হলাম। টেলিভিশনে যাবো শুনে গৃহপরিচারিকা বারে বারে আলমিরা খুলে রঙ্গিন শাড়ি এগিয়ে দেয়। আমি প্রত্যাখ্যান করি এইটা না ঐটা। সে জানতে চায় কি হয়েছে। আমি কিছু বলি না। অতঃপর সাদামাটা একটি সাদা শাড়ি পছন্দ করি পড়ার জন্য। গৃহপরিচারিকার আবার প্রশ্ন, এত শাড়ি রেখে সাদা কেন আপু? আমি বললাম, সাদা রং শান্তির প্রতীক, আর আমার মনটা ভালো নেই। টেলিভিশনে সুখের কথা বলতে যাচ্ছি না, যাচ্ছি অসুখের কথা বলতে। আবার জানতে চায় কার অসুখ? উত্তর দেই আমার প্রিয় প্রাঙ্গনের। সে বলে, জাহাঙ্গীরনগর? তুমি কিভাবে বুঝলে জাহাঙ্গীরনগর আামর প্রিয় প্রাঙ্গন? তার উত্তর, আপনি তো সারাদিন জাহাঙ্গীরনগর জাহাঙ্গীরনগর করতে থাকেন। আমি আবারো ধাক্কা খাই।
বাসা থেকে বেরিয়ে এগুতে থাকি চ্যানেল আইয়ের দিকে। কি বলব, কোথা থেকে শুরু করব, কয়টা বলব? কোন জায়গা থেকে শুরু করব? চোখে ভাসছে কত স্মৃতি।
আজ আমার প্রিয় প্রাঙ্গনের অসুস্থতা নিয়ে কেন বলতে হবে। আমি তো সুখের কথা বলি সবসময়। কতিপয় শিক্ষার্থী আমার সহকর্মীকে আঙ্গুল তুলে বলছে তুমি কে? তুমি কে? আমি সেই সহকর্মীর চেহারায় অসহায়ত্ব দেখি। একাই কাঁদি। আমি তো এই স্মৃতি ভুলতে পারি না। উপাচার্যকে তুচ্ছার্থক ভাষা প্রয়োগ করা, উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহের নামে উপাচার্য যে রঙের শাড়ি সচরাচর পরেন, সে ধরনের শাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি। কারো কারো গায়ে সেই হাতাহাতিতে আঘাত লাগা। কোন স্থান থেকে শুরু করব আমি। ভাবতে ভাবতে অনুষ্ঠানস্থলে চলে আসি। বিষন্নতা এড়িয়ে কথা বলে যাই। যা মনে এসেছে তাই বলে আসি। কেউ জানতে ও পারলো না কি এক বিষন্নতায় গতকাল চ্যানেল আইয়ের প্রোগ্রামে বেখেয়ালি হয়েছিলাম। অথচ যা বলতে চেয়েছিলাম, তা আর বলা হলো না।
ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরি। না। আমার মন ভালো হয় না। পঞ্চাশের দ্বারপ্রান্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জাতীয় এবং আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে জ্ঞানের বিস্তার ঘটিয়েছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় “সাংস্কৃতিক রাজধানী”। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হচ্ছে বলে যারা জানেন সেই সময়েও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থাকে শিক্ষার্থীবৃন্দ দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এমনকি গত কয়েকমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থীবৃন্দের যে আন্দোলন চলছে, তাদের এই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে তালা থাকলেও সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করে তালা ভেঙ্গেই তারা নিয়মিত ক্লাসে এবং পরীক্ষায় বসেছে।
বাসায় ফিরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হাতড়াতে থাকি। চোখ পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম শাহনেওয়াজ স্যারের পোষ্ট। যার চুম্বক অংশ তুলে ধরছি, স্যার লিখেছেন, “আমার এক ছাত্রী ফোন করলো স্যার আপনি বিভাগে না আসলেই ভালো। ভবনের কলাপসিবল গেট পাহারায় যে ছাত্ররা আছে তার আড়াল থেকে তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন কয়েকজন সম্মানিত শিক্ষক। ভবনে ঢুকতে গেলে ওরা শিক্ষকদের অপমানিত করে। চারদিক থেকে আজেবাজে কমেন্ট করতে ছাড়ে না। আমরা চাই না আপনাকে কেউ বাজে কথা বলুক। ওর সতর্কবার্তাটি আমার ভালো লাগলো না। আমিতো জাবির ছাত্র ছিলাম। প্রায় ৪০ বছর কাটিয়ে দিলাম এই ক্যাম্পাসে। মনে পড়ে, আমার শিক্ষক বলেছিলেন, রাজধানীর খুব কাছে হওয়ায় এইসব কিছুর পর ও একটি গ্রাম্যতা থেকে যাবে। এর প্রকাশ দেখবে ছাত্র-শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলনে-বলনে-পোশাকে একটু বেশি আলাদা এবং মার্জিত মনে হবে। আমি বুঝে পাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে রাজপথের আন্দোলনের মতো কেন পিকেটিং হবে, কেন একাডেমিক ভবন বন্ধ করে পাহারাদারদের মতো আমাদের ছাত্রদের কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকে, তা দেখতে ভালো লাগে না।” স্যারের লেখাটি পড়ে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছিলো।
নষ্টালজিক হয়ে ফিরে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন দুই উপাচার্যের সময়ে অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির এবং অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন স্যারের সেই দিনগুলোতে। এই দুইজন স্যারকে অবরোধ করে রাখা হয়েছিল। অথচ এই দুইজনের একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক উপহার দিয়েছিলেন এবং আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর উপহার দিয়েছিলেন। যা আমরা দিব্যি ভুলে গিয়েছি। দু’জনই পেশাগত জীবনে যথেষ্ঠ সম্মানের, শ্রদ্ধার এবং বোদ্ধা। আর এখন অবরোধ করে রাখা হয়েছে বর্তমান উপাচার্যকে। এভাবে বারে বারে বিশিষ্টজনদের অবরুদ্ধ করে প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে আমরা সহনশীল এবং পরমতসহিষ্ণু নই। খুব বেশীমাত্রায় পরশ্রীকাতর। অতিসম্প্রতি এই অবরোধ সংস্কৃতি যেন বন্ধ হয়ে যায় সেই প্রার্থনা অসীমের কাছে রইল। ভাবতে ভাবতে গভীর রাত ঘনিয়ে আসে। ঘুম তো আসে না। অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে নির্ঘুম কেটে যায় বিষন্ন রাত।
সকালে দেখি আমার এক সহকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “একজন মানুষকে গৃহে অন্তরীণ করা অথবা করার চেষ্টা করা তার ব্যক্তিগত ও নিরাপদ জায়গায় আঘাত ও সাংবিধানিক অধিকারকে বাধাগ্রস্থ করার অপরাধ বলে মনে করি। গত কয়েকদিন জাতির বিবেক বলে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামনে ভিন্নমতের শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা যে অশ্রাব্য ভাষা ও শব্দ চয়ন করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখের। শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। আমার ছাত্র ছাত্রী এবং বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে এই ধরণের আচরণ ও ভাষার প্রয়োগ আমাকে কষ্ট দিয়েছে। উপলব্ধি করলাম নিজের মতের সাথে যেসব ছাত্রছাত্রীরা অন্য মতের শিক্ষকদের গালিগালাজ করেছেন তা আমাদের চোখে ধরা পড়েনি। কিন্তু ভিন্নমতের ছাত্রছাত্রীরা যখন গালিগালাজ করেছে, সেটি আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের প্রয়োজনে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। অন্যথায় আমাদের নৈতিকতা শূন্যের নিচে চলে যাবে। সমাজ ও রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে মর্যাদা দিয়েছে আমরা প্রতিনিয়ত সেই মর্যাদাকে নিজেরাই ভুলুন্ঠিত করছি।” লেখাটি পড়ে ভাবলাম যা আমি লিখতে চেয়েছিলাম, তা লেখা হয়ে গিয়েছে। তার মানে আমার মতো অনেকেই ভাবছেন এমন করে।
আবারো আজ জেএসসি পরীক্ষা, কেন্দ্রের ফটকে একজন অভিভাবক জানতে চাইছিলো, আপা আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কতজন? আমার উত্তর ১৪,০০০ এর কাছাকাছি। এরপর প্রশ্ন করছেন আপা শিক্ষক কয়জন? উত্তর দেই ৭০০ এর অধিক। আপা বিষন্ন লাগছে কেন? আমার উত্তর, এমনি। আচ্ছা আপা সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকতো আন্দোলনে নেই? তাহলে এটা কি করে আন্দোলন হয়? আমি বললাম আপনার মতে কি তাহলে? তিনি বললেন, এটা অরাজকতা। এবার আবারো ধাক্কা খাই।
তার কিছুক্ষণ পরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার এক বক্তব্যে বলছিলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে কেউ যদি প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” বিদ্যালয়ের ফটকে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে সেই অভিভাবক আর আমি বক্তব্যটি শুনলাম। এই তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন আপনি। আপনার দিকে তাকিয়েছিলাম। আইন নিজের হাতে আমরা তুলে নিতে পারি না। হ্যাঁ, আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তাই বলে রাষ্ট্রের বাইরে বা আইনের ঊর্ধ্বে নই। যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের অভ্যন্তরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন রয়েছে, রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সর্বোপরি আছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের একটি ব্যক্তিগত, সামাজিক পরিমন্ডল রয়েছে। তিনি যথেষ্ঠ প্রজ্ঞাময়ী এবং বিদুষী। ড. ফারজানা ইসলাম নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তাকে ছোট করার জন্য তার স্বামী, সন্তানকে টেনে আনা, তাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করা আমার কাছে যুৎসই মনে হয়নি। কেন জানি বারে বারে মনের অজান্তে বিষয়টি ঘুরে ফিরে আসে। ফারজানা ইসলাম নারী বলে, বেশি ধকল সইছে না তো। নারী নেতৃত্ব কেউ কেউ সহ্য করতে পারছে না, সেই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা থেকে তাকে বেশি ধকল সইতে হচ্ছে না তো?
আমি ব্যক্তিগতভাবে অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের গঠনমূলক বক্তব্যের একজন ভক্ত। আমি প্রতিনিয়ত তার কথা শুনে তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। কয়দিন পূর্বে এক আলাপচারিতায় তিনি বলছিলেন, “আমার এখন ৬০ এর অধিক বয়স। পৃথিবী ছেড়ে যাবার কথা ভেবে, এখন আমি জীবনের বোঝা কমাতে ব্যস্ত। অথচ আমাকে এখন বইতে হচ্ছে দুর্নীতির কলংকের বোঝা। জাহাঙ্গীরনগর আমাকে চিনল না।” ম্যামের এই কথাটি আমাকে ভীষণ ভাবিয়েছে। বেশ কয়কে বছর পূর্বে বিশ্ববিদ্যায়ের একজন অধ্যাপক বলেছিলেন, “উপাচার্যের মাথায় গুজে রাখা ক্লিপটিও সৎ পয়সায় কেনা।” সেদিন থেকে আমি আরও ভক্ত হয়ে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক মানতে চান না, তিনি দুর্নীতি করতে পারেন। যারা এই অভিযোগ তুলেছেন তারা প্রমাণ করুক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাই আহ্বান করেছেন। এভাবে অবরোধের সংস্কৃতি, তালা মারা সংস্কৃতি বন্ধ না হলে আজ যারা অবরুদ্ধ করছেন, কাল তাকেও হয়তো উপাচার্য হয়ে অবরুদ্ধ হতে পারে।
কয়দিন পূর্বে এক বয়োজ্যেষ্ঠ অধ্যাপক যিনি জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র ছিলেন, তাকে বলছিলাম, “স্যার ম্যামের মেয়াদ শেষ হলে আপনাকে উপাচার্য হিসেবে পেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ধন্য হবে।” স্যার বললেন, “কি বলো এসব? আমি কখনই এই পদে যাবো না। এই অবরোধের সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হবো আমি? অসম্ভব।” আমি স্যারের কথা শুনে হতাশ হই। বুঝতে আর বাকি থাকে না অবরোধের সংস্কৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। যে ক্ষত সারাবার মোক্ষম সময় এখনই। নইলে অবরোধের সংস্কৃতির আতংক থেকে বিশিষ্টজনেরা মুখ ফিরিয়ে নিলে আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় যাবে কোথায়?
মনে পড়ে অধ্যাপক ড. এ.কে.এম শাহনেওয়াজ স্যারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা শেষ কয়টি কথা, “দিন শেষে এখন কষ্টের সাথে প্রতিদিন ভাবনা হয়। আমার প্রিয় ক্যাম্পাস এটি। শিক্ষকতার আনন্দ নিয়ে শিক্ষক হয়েছিলাম। অল্প কয়েকবছর পরই অবসরে যাবো। এখন বিস্ময়ের সাথে নিজেকে দেখি। ভাবি অবসরের সময়টা দ্রত কমে আসছে না কেন?” কথাটি পড়ে ডুকরে ডুকরে কান্না আসে। নিজেকে প্রশ্ন করি আমিও তো আনন্দ নিয়েই শিক্ষকতায় এসেছিলাম। আমাকেও কি অবসরের কাছাকাছি সময়ে এমন করে ভাবতে হবে?
না, আমি এমন করে ভাবতে চাই না, আমি তখন লিখতে চাই অবসরের সময় ধীরে ধীরে আসুক। আর তার জন্য এখন থেকেই শক্তভাবে দৃঢ়তার সাথে সৎ থেকে যে কাজ করতে হবে এটুকু বুঝতে বাকি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীবৃন্দকে পাঠদানের সুযোগ নেই। সরাসরি শিক্ষার্থীবৃন্দকে এটুকু শিখিয়ে দিয়েছি। কারো দ্বারা প্ররোচিত হইও না। মনে রেখো, তোমারও একটি মস্তিষ্ক আছে, আছে বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা।
আমার প্রিয় প্রাঙ্গনে যারা এখনো আন্দোলনে ব্যস্ত আছেন, তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান, ফিরে আসুন। বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থিতিশীল করার জন্য একযোগে কাজ করুন। আমার এই প্রিয় প্রাঙ্গনের দিকে তাকিয়ে কেউ কটু কথা বলুক, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না। আমার বিশ্বাস যারা সত্যিকারভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ভালোবাসেন তারা কেউই চায় না। সব ভুলে গিয়ে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি স্বপ্নের ক্যাম্পাস নির্মাণ করি। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করে সবাই যেন বিমোহিত হয়। সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে গড়ে তুলি আমাদের জাহাঙ্গীরনগর।
ড. জেবউননেছা সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
*****************************************************************************************************************
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রকাশিত লেখার জন্য ঢাকা ট্রিবিউন কোনও ধরনের দায় নেবে না।