কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসে দোল উৎসব হয় বৃহস্পতিবার। সেই উৎসবে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বিকৃত করে আবির দিয়ে বুকে-পিঠে ‘অশ্লীল’ শব্দ লিখে নাচানাচি করতে। এমন কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিতর্ক দেখা দেয়। এবার ওই ঘটনায় সিঁথি থানায় অভিযোগ জানালো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই ঘটনায় যুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে। তারা সবাই হুগলির শ্রীরামপুর কলেজের শিক্ষার্থী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এদিকে কৃতকর্মের জন্য শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হয়ে ‘ক্ষমা’ চেয়েছে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী। নিজেদের ভুল স্বীকার করার পাশপাশি তারা তাদের ছবি বিকৃত করা হয়েছে বলেও পাল্টা অভিযোগও করেছে।
পুরো ঘটনায় রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী শুক্রবার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরেই ঘটনাটি আমাদের নজরে আসে। তার পরেই আমরা উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাই। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন।’
এক ছাত্র বলেন, ‘বাইরের কিছু ছাত্রছাত্রীর জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নাম হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
আরেক ছাত্রী বলেন, ‘ওরা ৬ জন ছিল। তার মধ্যে পাঁচ জনকে চিহ্নিত করা গেছে। এটা বিকৃত মানসিকতার লক্ষণ। ওদের জন্য আমাদের বদনাম হচ্ছে। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উৎসবে বাইরের কাউকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না। এখানকার শিক্ষার্থীদের নিয়েই উৎসব হবে।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী বছর থেকে বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হবে কিনা, ইতোমধ্যে সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নেত্রী সুপর্ণা দাসের কথায়, সামনের বছর বসন্ত উৎসব হবে কিনা, যদি হয় তাহলে বাইরের কাউকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, সবটাই ভাবনাচিন্তার বিষয়। বিবেচনা করে দেখা হবে। কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের সঙ্গে আপোস করা হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এমন ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনেরাও। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এই সংস্কৃতির প্রবর্তকদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। কড়া নিন্দা জানিয়েছেন চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। রবীন্দ্রভারতীর ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী সেনও। সামনের বছর থেকে রবীন্দ্রভারতীতে বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে প্রশ্ন তোলেন তিনিও।