ঢাকা: রাজধানীর শাহজাহানপুরে পাইপে পড়ে তিন বছরের শিশু জিহাদের মৃত্যুর মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত চার আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রেলওয়ের ম্যানুয়াল ও তাদের জব ডেসক্রিপশনে পরিত্যক্ত পাইপ নিয়ে বলা নেই, এটা রক্ষণাবেক্ষণে কার কী দায়িত্ব হবে।  এছাড়া এর আগে এক রিট মামলার রায় অনুসারে জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এসব বিবেচনায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট নয়। তাই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত রায়ে চার আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাদের দুই লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। এছাড়া বাকি দুই আসামি খালাস পান।

দণ্ডপ্রাপ্ত চারজন শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআরের মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ওরফে শফিকুল ইসলাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার জাফর আহমেদ শাকি।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছিলেন কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী দিপক কুমার ভৌমিক ও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। পরে দণ্ডিত চারজন হাইকোর্টে আপিল করেন।

এদিকে, জাফর আহমেদ শাকির আইনজীবী এসএম শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুনানিতে বলেছি, এটা রেলওয়ের পরিত্যক্ত পাইপ। এ বিষয়ে জাফর আহমেদের কোনো দায়িত্ব ছিল না। আমরা খালাস চেয়েছিলাম। রায়ে আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।

মো. নাসির উদ্দিনের আইনজীবী আনোয়ার ইসলাম শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, বিচারিক আদালতে যে ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটা যথাযথ হয়নি। এছাড়া ওনাদের (রেলওয়ে) ম্যানুয়াল অনুসারে পরিত্যক্ত পাইপ রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্ব নেই। এছাড়া রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা বাদীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ আদালত আমাদের আপিল মঞ্জুর করেছেন।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহত জিহাদের বাবা নাসির ফকির ফৌজদারি আইনের ৩০৪/ক ধারায় ‘দায়িত্বে অবেহেলায়’ জিহাদের মৃত্যুর অভিযোগে শাহজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় ২০১৬ সালের ০৪ অক্টোবর ৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন আদালত।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ‘এসআর হাউজ নামক প্রতিষ্ঠান শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘ মাঠের পূর্ব দক্ষিণ কোণে একটি পানির পাম্পের ঠিকাদারি নিয়ে অনুমান ৬০০ ফুট কূপ খনন করে। কিন্তু কূপের মুখ খোলা রেখে কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে অবহেলা ও তাচ্ছিল্যভরে তা দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। ফলে শিশু জিহাদ (৩) ওই স্থানে খেলা করতে গিয়ে পাইপের ভেতরে পরে গিয়ে মারা যায়।

এদিকে, ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ‘চিল্ড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম হাইকোর্টে রিট করেন।

পরে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিশু জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রুলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে শিশু জিহাদের পরিবারকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা (মোট ২০ লাখ টাকা) ৯০ দিনের মধ্যে তার বাবা-মার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে এর বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর দুই কর্তৃপক্ষ জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
ইএস/টিএ