চট্টগ্রাম: ‘এ কোন আলামত? পাকিস্তানি সেনা পরীক্ষা করছে লোকটি হিন্দু না মুসলিম।’ ক্যাপশনটি একটি আলোচিত ছবির। যে ছবিটি ১৯৭১ সালের, মহান মুক্তিযুদ্ধের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন সেনা লুঙ্গি পরা একজনের লুঙ্গির এক অংশ খুলে হিন্দু না মুসলিম পরীক্ষা করছেন।

দু’টি রিকশার মধ্যে রিকশাচালক ও যাত্রীর মরদেহ পড়ে আছে। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালো রাতের পরের ছবি দু’টিই বলে দিচ্ছে-পাকিস্তানি সেনারা কীভাবে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। আছে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের দাবিতে রাজপথের বিভিন্ন ছবিও।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে উৎফুল্ল জনতার ভিড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের বঙ্গবন্ধুর ছবিটিও করছে ঝলমল! ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এরকম শতাধিক ছবির মিনি জাদুঘর শোভা পাচ্ছে সিটি করপোরেশনের আয়োজিত এবারের বইমেলায়। ছবি দেখে দেখে এসব ইতিহাস ১০ মিনিটে জানতে পারছেন পাঠকরা।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাড়িতে টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন সেই বাড়ির ছবি এবং ১৮৫৪ সালে টুঙ্গিপাড়ায় নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক নিবাস। যেখানে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন।

সিজেকেএস জিমনেসিয়াম চত্বরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত বইমেলায় দুর্লভ এসব ছবি বন্ধুদের সঙ্গে দেখছিলেন চট্টগ্রাম মুসলিম হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র রাকিব হাসান। নিজের মুঠোফোনে ছবিগুলো ধারণও করছিলো সে। রাকিব হাসান বাংলানিউজকে বলে, বইমেলায় এ উদ্যোগটি অনেক ভালো লেগেছে। ১০ মিনিট ঘুরে দেখে পুরো ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারছি।

প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে দুর্লভ সব ছবিরাকিব হাসানের সহপাঠী আদমান সাদিক বাংলানিউজকে বলে, প্রথমা প্রকাশনী থেকে বেবী মওদুদের লেখা ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ ও ‘নিঃসঙ্গ কারাগারে শেখ হাসিনার  ৩৩১ দিন’ বইটি সংগ্রহ করলাম। তারপর দুর্লভ ছবির মিনি জাদুঘরে এসে অজানা ইতিহাস স্বচক্ষে দেখলাম। আমাদের অ্যাকাডেমিক বইয়ে পড়া আর বাস্তব ছবি আরও বেশি করুণ। আহা! মুক্তিযুদ্ধ কতো রক্তের ইতিহাস, কতো মা-বোনদের ইজ্জত হারানোর ইতিহাস।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী মুহসিনা চৌধুরী। ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ছবিটি দেখে অবাক হয়ে মুখে এক হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যে আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিপক্ষে ছিলো সেই দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ও শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ইন্ধিরা গান্ধীর বৈঠক।

‘ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী কতো মহানুভব ছিলেন বাংলাদেশের প্রতি। হাজার হাজার শ্রদ্ধা এই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।’ যোগ করেন মুহসিনা চৌধুরী।

এদিকে একুশে বইমেলার তৃতীয় দিনে আগের দিনের চেয়ে বইপ্রেমিকদের ভিড় দেখা গেছে। এবারের বইমেলায় শত শত লেখকের নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। যেমন অন্য প্রকাশনী প্রকাশ করেছে হুমায়ূন আহমদের লীলাবতির মৃত্যু, রঙপেন্সিল, নতুন লেখকের মধ্যে সাদাত হোসেনের মেঘের দিন ও মরণোত্তর, প্রথমা প্রকাশনীর উৎপল শুভ্রের কল্পলোকের ক্রিকেটের গল্প, গ্রেম-ব্রাডম্যানদের গল্প-আড্ডায় সেই আশ্বর্য সময়, নিউজিল্যান্ড-দুঃস্বপ্ন আগে ও পরে অন্যতম।

প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. রিফাতুল ইসলাম অনিক বাংলানিউজকে বলেন, এবারও নতুন লেখকের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। বইপ্রেমীদের আনাগোনা আস্তে আস্তে বাড়ছে।

একুশে বইমেলার যুগ্ম সদস্যসচিব ও বলাকা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় দিন থেকে বইপ্রেমিকদের ভিড় বাড়ছে। মেলায় ২০৬টি প্রকাশনীর স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি চট্টগ্রামের আর বাকিগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার।

>> জাতিকে বিদেশিদের কাছে খাটো না করতে বিএনপিকে অনুরোধ
>> বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত চট্টগ্রামের একুশে বইমেলা শুরু

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
জেইউ/টিসি