দর্পণ ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করাতে চায়। ইসি যদি এটা করে তবে তারা সংবিধানের বিরুদ্ধে কাজ করবে। তারা জনগণের কাছে যে শপথ নিয়েছে, সেই শপথের বাইরে চলে যাবে। নিঃসন্দেহে সেটি হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের’ দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন একটিই থাকতে হবে। কিন্তু ইসিতে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, এটা রাষ্ট্রের সংকট। ইসির একজন কমিশনার প্রকাশ্য বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তার দেয়া প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না। আরেকজন কমিশনার তার প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক বলছেন। নির্বাচন কমিশনাররা নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি, এই ইসি যোগ্য নয়। এরা নির্বাচন করতে পারবে না। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচনের সময় সব মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে থাকবে। তারা যখন যাকে ইচ্ছা নিতে পারবে, প্রয়োজনে যাকে ইচ্ছা তাকে বদলি করতে পারবে। কিন্তু পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারের ওপর। কিন্তু যে সরকার ইতিমধ্যে সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করেছে, তাদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা অসম্ভব।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবের কথা শুনলে মনে হয়, তিনিই প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে মনে হয় সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি। তিনি সকালে এক কথা বলেন, বিকেলে আরেক কথা বলেন। এই ইসির অধীনে কিভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আমরা ইসিতে গিয়ে বলেছিলাম, নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করুন, কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সেই ব্যবস্থা করুন। সিইসি বলেছিলেন, এটা করার তার এখতিয়ার নেই। সিইসির এখতিয়ার কি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো?

বিএনপি যথেষ্ট সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। মানুষ পরিবর্তন চায়। খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখে নির্বাচন করলে সেই নির্বাচন মানুষ মেনে নেবে না।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গোটা দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা এই সরকারের পরিবর্তন চায়। আগামী নির্বাচন অবশ্যই সবার কাছে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ২৩ তারিখে একটা জনসভা করতে চেয়েছিল। নাশকতা হতে পারে- এমন কারণ দেখিয়ে অনুমতি দেয়নি সরকার। অথচ চরমোনাই পীর সাহেবের একটি সভায় অনুমতি দেয়া হয়েছে। আজকে রাস্তাঘাট বন্ধ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করছে জাতীয় পার্টি।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দয়া করে সোজা রাস্তায় আসুন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তার ও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করুন। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করুন। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। দেশের মানুষের কল্যাণ ও শান্তির জন্য, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধান করুন। অন্যথায় এর সব দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি তাসমিয়া প্রধানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সহ-সভাপতি আবু মোজাফফর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর প্রমুখ।

আমিনুর