দর্পণ রিপোর্ট :
অবশেষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আগামী মন্ত্রীসভা বৈঠকেই বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩২ করার প্রস্তাব মন্ত্রীসভার বৈঠকে অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ ইতিমধ্যে চুড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে মন্ত্রীসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এবং সংসদ, সংসদীয় কমিটি, জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন প্রস্তাব বিবেচনায় নিচ্ছে। উন্নত দেশগুলো তাদের জনগণকে মানবসম্পদে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট করেনি। পার্শ্ববর্তী দেশসহ ওই সব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয় ৩৫, ইতালিতে ৩৫ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্সে ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত। আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মতো সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যেকোনো বয়সে আবেদন করা যায়।
রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে, তবে ৬৫ বছরের উর্ধে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছরের পরিবর্তে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩২ বছর করা হচ্ছে এটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে সরকার চাইলে প্রবেশের বয়স ৩৫ বা তার কম-বেশি করতে পারে। তবে একইসঙ্গে অবসরের বয়স বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। দুটি বিষয়েই সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে একটি সার্কুলার শিগগির জারি করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সংসদীয় কমিটি চাকরির বয়স এন্ট্রি লেভেলে ৩৫ ও এক্সিট লেভেলে ৬৫ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব পুরোপুরি রক্ষা করা যাবে কি না সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত উভয় দিকে দুই বছর করে বাড়ানো হতে পারে। তবে অবসরের বয়স বাড়াতে গেলে ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী আইন সংশোধন করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিগগির চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো সংক্রান্ত সার্কুলার জারির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দিকে বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। আর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স ৬০ বছর। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ ও বিচারপতিরা ৬৭ বছর বয়সে অবসরের সুবিধা পাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, স্থায়ী কমিটির সুপারিশ আমাদের পর্যালোচনা করতে হবে। আমরা কতটুকু, কী বাস্তবায়ন করতে পারব বা বাস্তবায়ন করতে পারব কি না সেটা দেখব। আমরা এ ব্যাপারে পেপার্স তৈরি করছি। আমাদের কিছু সময় দিতে হবে। তারপর যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের আর একটি সূত্র জানায়, চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হলেও অবসরের বয়স বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। কারন অবসরের বয়স বাড়ানো হলে শূণ্য পদেও সংখ্যা বাড়বে না। এজন্য এখন কেবল চাকরিতে প্রবেশের বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে শুধুমাত্র অবসরের বয়স দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল, প্রবেশের বয়স বাড়ানো হয়নি, সে বাস্তবতায়ও অবসরের বয়স না বাড়ালেও চলে।
এ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অনেক বেশি হলেও আমাদের দেশের বাস্তবতায় ৩২ বছর এ মুহুর্তে যুক্তযুক্ত। অদুর ভবিষ্যতে ৩৫ করা যেতে পারে। সরকারের যদি এ সিদ্ধান্ত চুড়ান্তভাবে অনুমোদন করে, তবে তা অবশ্যই ভাল কাজ হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সর্বমহলের প্রশংসা পাবে।