অনলাইন ডেস্ক : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিশ্বাস, টানা তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসছে তার দল আওয়ামী লীগ।

এরপরে আর মন্ত্রিসভায় না থাকার ঘোষণা দেওয়া মুহিত আগামী সরকারের আমলে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বড় কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে সে পরিকল্পনাও জানিয়েছেন।

বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে যেভাবে বলা হয় আসলে তত টাকা পাচার হয় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বুধবার এক প্রাক বাজেট আলোচনায় এসব বিষয়ে কথা বলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, যিনি ১২ বারের মতো বাংলাদেশের বাজেট দিতে চলেছেন।

এবার মানবসম্পদ উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই বাজেটই হবে তার দেওয়া বাজেটগুলোর মধ্যে ‘শ্রেষ্ঠতম’।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিত বলেন, “আমি শতভাগ নিশ্চিত আওয়মী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। সরকার গঠন করবে।…এটা আমার পারসোনাল অভিমত।”

এই আত্মবিশ্বাসের কারণ স্পষ্ট করেননি অর্থমন্ত্রী। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসার কথা বলেছেন তিনি।

মুহিত বলেন, “হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আর কখনও এগুলো আসবে না।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সাল থেকে হরতালের পাশাপাশি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না হওয়ায় দেশে গত তিন বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। সে কারণে নতুন বাজেটে মানবসম্পদের ওপর ‘সবচেয়ে বেশি’ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই প্রাক বাজেট আলোচনা হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হবে।

“নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়ানো হবে। বর্তমানে দেশে করপোরেট ট্যাক্স খুব বেশি, নতুন বাজেটে এটা কিছুটা কমানো হবে।”

বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ যারা আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন তাদের কোনো কর দিতে হয় না।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ।আর অতালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর হার ৩৫ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ছাড়া)/ সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে অনুমোদিত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০ শতাংশ কর হার বহাল রয়েছে।

অতালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির জন্য ৪৫ শতাংশ কর ধার্য আছে।

এছাড়া তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি ৪০ শতাংশ ও অতালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি ৪৫ শতাংশ কর দেয়।

প্রাক বাজেট আলোচনায় মুহিত বলেন, একটা সময় কল্পনা করা যেত না যে দেশের অর্ধেক মানুষ ট্যাক্স দেবে।

“আমার এখন মনে হয়, ২০২০-২১ সালের মধ্যেই দেশের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ ট্যাক্স দেবে। ইট’স এ ভেরি গুড ডেভেলপমেন্ট। আমি এটা নিয়ে অত্যন্ত প্রাউড।

“আমাদের একটা ভীতি ছিল যে, একবার ট্যাক্স রিটার্ন দিলে আটকা পড়ব, আর কোনো দিন বের হতে পারব না। এই ভীতিটা এখন নেই, এখন কর প্রদান অলমোস্ট একটা উৎসবের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

নতুন বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মত হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অবকাঠামোখাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে। অগ্রাধিকার থাকবে মানবসম্পদ উন্নয়নে, সমান গুরুত্ব পাবে শিক্ষা ও স্যানিটেশন।

এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার পুরোটাই সরকারিকরণ করা হবে।

“সেকেন্ডারি স্কুলের সংখ্যার দিক থেকে একটা ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে, এখন কোয়ালিটির দিকে নজর দিচ্ছি। আগামী বজেটেও কিছু সংখ্যক এমপিও দেব। কিন্তু এমপিও শুধু শিক্ষকদের জন্য হবে না, এমপিও হবে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উপকরণের জন্য। এজন্য আলাদা আলাদা করে বরাদ্দ রাখা হবে। এ বরাদ্দটাও নির্ধারণ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।”

আগামী বাজেটেই শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে স্কুল বাস নামানোর বিষয়েও ঘোষণা থাকবে বলে জানান তিনি।

তবে এবার জেলা বাজেটের ওপর আর গুরুত্ব দেওয়া হবে না বলে জানান মুহিত।

বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ে যেভাবে বলা হয় আসলে তত টাকা পাচার হয় না।

“একটা সময় মালয়েশিয়া বা দুবাইতে পাচার হত, এখন উভয় দেশের সরকারও চায় না অর্থ পাচার হয়ে আসুক।”

আলোচনায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিজভী নেওয়াজ বক্তব্য রাখেন।