গনেশ চন্দ্র হাওলাদার, বার্তা সম্পাদক, দৈনিক দর্পণ প্রতিদিন:
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিগত মাসাধিকাল ধরে যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও শঙ্কা রাজধানীসহ সমগ্র বাংলাদেশে জনমনে সৃষ্টি হয়েছিল আজ ১ ফ্রেরুয়ারি ২০২০ শনিবার ভোটগ্রহণ এর মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটল। এখন চলছে ফলাফল ঘোষণা।
ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকা মেয়র পদে দুই সিটিতে দুজন জয় লাভ করবে ও কাউন্সিলর পদে প্রতি ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী জয় লাভ করবে এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, বিশ্বের সকল দেশের ভোটের প্রক্রিয়া প্রায় এক রকমই। তবে বাংলাদেশের ভোটের ক্ষেত্রে যেটা স্বাভাবিক নয় সেটা হচ্ছে, পরাজিত প্রার্থী কখনই বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানায় না কিংবা ভোট সুষ্ঠ হয়েছে বলেও মেনে নেয় না। হয়ত তারও অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই ধরে নিতেই পারি আজকে অনুষ্ঠিত হওয়া ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, পরাজিত প্রার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই তা মানবেন না। এছাড়া এশিয়ার দেশগুলিতে ভোট চলাকালীন প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের পাশাপাশি একটা যুদ্ধাংদেহী ভাব থাকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে অবস্থাটা একটু বেশিই বলা চলে।

বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক ও একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই বেলা ১১টা নাগাদ বের হলাম ভোটের সার্বিক অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য কেন্দ্র পর্যবেক্ষনে। দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন এর সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ট সহকর্মী হরলাল রায় সাগর দাদার মটরবাইকে চড়ে শুরুতেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভূক্ত বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করলাম। প্রথমেই আমরা কেন্দ্রে দায়িত্বরত নিরাপত্তার কর্মকর্তার মাধ্যমে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইটিং অফিসারের কক্ষ খুঁজে নিয়ে তার সাথে কথা বললাম। আমরা আমাদের পরিচয় দিলাম, যদিও আমাদের গলায় ঝুলান নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র দেখে তিনি আমাদের পরিচয় বুঝতে পেরেছিলেন। তার নাম জানালেন রাজেশ কুমার ধর, তিনি ঢাকা ওয়াশার একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। আমার দেখায় তিনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। তার কাছ থেকে জানলাম এটা একটি মহিলা ভোটারদের জন্য নির্ধারিত ভোট কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১৯৬৮ জন। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৭৩টি ভোট পড়েছে। তিনি তার কাছে থাকা ট্যাবে পুরো কেন্দ্রের ভোটের সামগ্রিক তথ্য কিভাবে মনিটর করছেন তা আমাদের দেখাচ্ছিলেন, এসময় দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকা ও সারা বাংলার দুজন রির্পোটার তার অনুমতি নিয়ে সে কক্ষে প্রবেশ করলেন। আমাদের চারজনের সকল অনুসন্ধানী প্রশ্নের উত্তর তিনি খুব আন্তরিকতার সাথে দিচ্ছিলেন। তিনি জানালেন প্রতি ২ ঘন্টা পর পর কেন্দ্রের ভোটের তথ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনে প্রেরন করা হয়। এছাড়া কারও আঙ্গুলের ছাপে যদি ভোট না দেয়া যায় তখন বিশেষ আবেদন ফরমে তথ্য পূরণ করে ১% ভোট তার অথরিটিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যম তার অনুমতি নিয়ে বিকল্প পন্থায় ভোটার নিশ্চিতকরণের মাধমে ভোট দেয়া যায়। সকাল থেকে এ কেন্দ্রে অত্যন্ত সুষ্ঠ ও সকল দলের পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে বলে জানালেন। সকাল থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইনের নিউজে আমরা জেনে আসছিলাম সরকার দলীয় নৌকা প্রতিকের বাদে অন্য কারও পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে নেই, তাই তার এ দাবীতে আমাদের যে সন্দেহের উদ্রেগ হয়েছে তা বুঝতে পেরে আমাদেরকে তিনি কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শনের আহ্বান জানালেন। আমরা এক এক জন আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন কক্ষে যেয়ে দেখলাম ৭-৮ জন পোলিং এজেন্ট প্রতিটা কক্ষে উপস্থিত রয়েছেন।

ইভিএম নিয়ে ভোটের শুরু থেকেই সরকারি দল বাদে রিরোধী সকল দলেরই নেতিবাচক প্রচারনা আমরা জানতাম, তাই কক্ষের কম্পিউটার মনিটরে ভোট দানের প্রক্রিয়া খুব নিবির ভাবে পর্যবেক্ষন করলাম। খুবই ভাল ও বিশ্বাসযোগ্য একটি আধুনিক সিস্টেম বলে আমার কাছে মনে হল। কেননা আঙ্গুলের ছাপ নির্দিষ্ট স্থানে দেয়ার পরই ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ভোটারের ছবি সহ প্রয়োজনীয় সংক্ষিপ্ত তথ্য মনিটরে ভেসে উঠল। আবার গোপন কক্ষে ভোট প্রদানের পর ভোট সম্পন্ন হওয়ার তথ্য ও মোট ভোট প্রদানের সংখ্যাও পরবর্তীত হয়ে দেখাচ্ছে। আমি দেখলাম ১নং কক্ষে মোট ভোটার ৩৯৮ জন তখন পর্যন্ত (বেলা ১১.৩০মি) ভোট পড়েছে ১৩টি, ২নং কক্ষে মোট ভোটার ৩৯৮ জন ভোট পড়েছে ২২টি। কক্ষ পরিদর্শন শেষে পুনরায়ঃ জনাব রাজেশকে এত কম ভোট পড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানালেন, এ কেন্দ্র এলাকায় রান্নার জন্য দুপুরের পর ঠিক মত গ্যাস থাকে না বলে মহিলা ভোটারগণ পরিবারের রান্ন্ কার্য সম্পন্ন করে দুপুরের পর ভোট দিতে আসবেন, এরকম তথ্য তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে এবং তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে জানেন।

আমাদের সাথে আলাপের মাঝেই বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক কেন্দ্রে প্রবেশ করলেন আমরা প্রিসাইডিং অফিসারকে ধন্যবাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসলাম। আসার সময় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যদের দেখলাম বেশ সতর্কভাবে ও সন্দেহ নিয়ে আমাদেরকে পর্যবেক্ষন করছে। এর মধ্যে জনৈক অফিসার আমাদের ডেইলি স্টার এর সহকর্মীর প্রতি কিছুটা অনুযোগ তুললেন কেন এত সময় একই কেন্দ্রে অবস্থান করছি আমরা। সারা বাংলার সহকর্মী বোনটি এবং হরলাল রায় সাগর দা এ ব্যাপারে কিছু বলার থাকলে প্রিসাইটিং অফিসারের মাধ্যমে বলার পরামর্শ দিলেন এবং স্মরণ করিয়ে দিলেন তারা যেমন সুষ্ঠ ভোটের লক্ষে দায়িত্ব পালন করছে সাংবাদিকরাও তাদের দায়িত্ব পালন করছে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি পত্র নিয়ে। তবে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আর কোন পক্ষ বাড়াবাড়ি না করায় কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আবার দুজনে বাইকে চড়ে পরবর্তী কেন্দ্র পর্যবেক্ষনে রওয়না হলাম।

এরপর শাহজাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরুল বাড্ডা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করলাম। প্রতিটা কেন্দ্রে শুধুমমাত্র সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বিপুল সংখ্যক সেচ্ছাসেবকদের দেখা পেলাম। উৎসবমুখর পরিবেশ তবে রাস্তাঘাটে কোন গণপরিবহন নেই। কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের সুদর্শন পুরুষ ও মহিলা পর্যবেক্ষক ও আমাদের বিভিন্ন মিডিয়ার সহকর্মীদের সাথে দেখা হতে থাকল। দেখলাম ভোট বেশ শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবের পরিবেশে সম্পন্ন হচ্ছে। তবে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থক ছাড়া অন্য প্রার্থীদের বিশেষ করে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থীর সমর্থদের কোন কেন্দ্রের আশে-পাশে চোখে পড়েনি।

যে কথা এ লেখার শুরুতেই লিখেছিলাম, লেখার মাঝখানে রাত ৮টা ৩০মিনিটে টিভি চালু করে ভোটের সর্বশেষ ফলাফল দেখতে যেয়ে দেখলাম দুই সিটি কর্পোরেশনেই সরকার দল সমর্থিত নৌকা প্রতিকের মেয়র প্রার্থী যথাক্রমে দক্ষিণে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এর তুলনায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতিকের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন এবং উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম এর তুলনায় তাবিথ আওয়াল বিপুল ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি আগামীকাল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে।

উল্লেখ্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এখানে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ টি, ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৫১৬ টি। দক্ষিণ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১২৪ টি, ভোটকক্ষ ৫৯৯৮ টি।

ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেয়া ও আমার মতামত


ভোটার হিসেবে আমিও প্রথম ইভিএম মেশিনে ভোট প্রদান করলাম আমার নির্ধারিত কেন্দ্র মেরুল বাড্ডা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্বাভাবিক কারণেই ইতিপূর্বে এ মেশিনটি কখনও প্রত্যক্ষ করিনি বলে ব্যাপক কৌতুহল ও সংশয় আমার মধ্যেও ছিল। দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে কেন্দ্রের সাামনে সহয়তা কেন্দ্রে আমার স্মার্ট কার্ডটি দেখিয়ে তাদের প্রদত্ত ভোটার স্লিপ সংগ্রহ করলাম। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে এসে দেখলাম আমার নির্ধারিত কক্ষে বেশ লম্বা লাইন। একটু অবাক হলাম, অন্য কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই নগন্য। সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষন সুবিধায় কেন্দ্রে প্রবেশ করার চিন্তা মাথায় আসলেও সুনাগরিকের বিষয় মাথায় রেখে নিয়ম মত লাইনে দাড়ালাম এবং ভোটের পরিবেশ ও প্রতিজন ভোটারের ভোট প্রদানের সময় হিসেব করে দেখলাম কমপক্ষে ৪০-৫০ মিনিট সময় দাড়াতে হবে।আমার সামনে পিছনের ভোটাররা ধীর গতির ভোট গ্রহণকে মহিলা কর্মবর্তার মাধ্যমে ভোট গ্রহণকে দায়ী করে সমালোচনা করতে ছিল।

তবে ভোট কেন্দ্রের সামনে থাকা সরকারি দলের সেচ্ছাসেবকগণ বার বার আমার বুকে ঝুলানো সাংবাদিক পরিচয় পত্রের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছিলেন। সাংবাদিকরা বেশিসময় উপস্থিত থাকুক সেটা হয়ত তারা আশা করছিল না। ৫ মিনিট পর দেখলাম এলাকার একজন বয়স্ক ভদ্রলোককে আলাদাভাবে তাঁর বুথে নিয়ে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করল একজন সেচ্ছাসেবক। এর ৫মিনিটের মাথায় আমার কাছে এসে সেই সেচ্ছাসেবক জানতে চাইল আমি সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে তারাতারি ভোট দিতে চাই কিনা। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার সাথে আমার বুথে প্রবেশ করলাম। আমার পূর্বে অন্য একজন ভোটারের তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলাম। কম্পিউটার মনিটরে দেখলাম এ বুথের ৩৯২ জন ভোটারের মধ্যে ১০০ জন ভোট দিয়েছেন। তার ভোট প্রক্রিয়া ৩-৪মিনিটে শেষ হল।
আমাকে আমার বৃদ্ধা আঙ্গুল নির্দিষ্ট স্থানে লাগাতে বললেন বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন মহিলা কর্মকর্তা, যিনি বেশ উৎসাহ নিয়ে ভোট গ্রহণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বৃদ্ধা আঙ্গুলের পর তর্জনীটিও আবার একই স্থানে স্পর্শ করতে হল এবং এরপর দেখলাম আমার ছবি, বয়স, নাম মনিটরে ভেসে উঠল। এরপর জানতে চাইল ভোটার লিস্টে আমি স্বাক্ষর না টিপ সই দেব। আমি স্বাক্ষর দেব বলতেই একটি কলম দিল, আমি আমার স্বাক্ষর করলাম। এরপর একজন আমার বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলের নখের নিচে অমুছনীয় কালির দাগ দিলেন। আমি গোপন কক্ষে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম ৩টি ইভিএম মেশিন পাশাপাশি রাখা। আগেই বলে দেয়া হয়েছিল ১ম মেশিনটি মেয়র প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য, ২য় টি কাউন্সিলর ও ৩য় টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে ভোট দেয়ার জন্য নির্ধারিত। আমি যথারীতি ডান পাশের সাদা বাটনে টিপ দিয়ে আমার পছন্দের প্রার্থীর মার্কা সিলেক্ট করে পরবর্তীতে মেশিনের নিচের দিকের সবুজ বাটনে টিপ দিয়ে ভোটটি কনফার্ম করলাম।

এভাবে পর পর তিনটি মেশিনের মাধ্যমে ভোট দিলাম এবং লক্ষ্য করলাম আমার দেয়া মার্কা মেশিনটির মনিটরে প্রদর্শিত হয়ে কনফার্ম একটি ম্যাসেজ উঠল। হঠাৎ খেয়াল করলাম ৪-৫ বছরের একটি শিশু কৌতুহল নিয়ে গোপন কক্ষে আমার ভোট প্রদান প্রক্রিয়া লক্ষ্য করছে। একটু চমকে গেলাম কিন্তু যখন বুঝলাম নিতান্তই শিশু, হয়ত অন্য কোন ভোটারের সাথে এসেছে, আমার উপড় গোয়েন্দাগিরি এই শিশুর উদ্দেশ্য নয় তখন বেশ স্বস্তি নিয়ে ফুর ফুরে মেজাজে বের হয়ে আসলাম, মাত্র ২ মিনিটে ভোটের যাবতীয় প্রক্রিয়া ও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে এরকম, আধুনিক ও স্বপ্ল সময়ে ভোট দিতে পেরে আমার মনে হল মানুষ নিছক সন্দেহবশতঃ ইভিএম নিয়ে এত সংশয় প্রকাশ করছে। তবে আমার ভোট যদি ঠিক ভাবে না দিতে পারতাম বা অন্য কেহ দিয়ে যেত আগেই যে অভিজ্ঞতাও জীবনে একবার হয়েছে, তাহলে মনের এ ফুর ফুরে ভাব থাকত কিনা জানিনা।

আমার নিজের ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়েছে এটা খুব ভাল সিস্টেম। জাল ভোট দেয়া সম্ভব নয়। ভোটার ভোট না দিলে ভোট কাস্টিং ইচ্ছামত বাড়ানোও যায় না এবং প্রতি মুহুর্তে মোট প্রদত্ত ভোট সংখ্যা সবাই দেখতে পারে, যা পুরানো পদ্ধতিতে কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না। পূর্বের মত ভোটের ব্যালট বাক্স ছিনতাই করার কোন উপায় নেই বিধায় এনিয়ে সংহিস ঘটনাও ঘটবে না, যেমনটি আজকের ভোটে তেমন কোন বড় অঘটন ঘটেনি কিংবা কোন কেন্দ্রে ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে হয়নি।
আজকের সামগ্রিক ভোট প্রক্রিয়া আমার দৃষ্টিতে পূর্বের তুলনায় বেশ ভাল। আশা করি ভোটের সকল প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে ভোটের তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই ভাল হবে যাতে করে সকল দল-মতের প্রার্থী সানন্দে তা গ্রহণ করবে।