অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুই মামলায়
ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার প্রভাবশালী ঠিকাদার বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা গোলাম
কিবরিয়া (জি কে) শামীমকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ৪ ও ৬ ফেব্রুয়ারি
হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ থেকে জামিন হয়েছে বলে শনিবার বিকেলে সমকালকে
জানিয়েছেন তার আইনজীবী শওকত ওসমান। একমাস আগে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ থেকে
জামিন হলেও রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। অথচ,
রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থিতি ছাড়া কখনই আদালতে মামলার শুনানি হয়না।

জামিনের এ বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত পাড়াসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়।
ঘটনা জানতে চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ফোনও দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ
বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সমকালকে বলেন, মন্ত্রী ফোন করে
বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্ঠ বেঞ্চে খোঁজ-খবর নিয়ে জানানো
হবে। তিনি আরও বলেন, জি কে শামীম যদি জামিন পেয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপক্ষ
ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে অবশ্যই আপিল করবে।

এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম
মুজিবুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৬ ফেব্রুয়ারি জি কে শামীমকে
অস্ত্র মামলায় ৬ মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।

এছাড়া বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীস্মদেব চক্রবর্তী সমন্বয়ে গঠিত
হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ গত ৪ ফেব্রুয়ারি মাদক মামলায় ৬ মাসের জামিন দেন
বলে সমকালকে জানিয়েছেন জি কে শামীমের আইনজীবী শওকত ওসমান। পাশাপাশি এ দুটি
মামলায় তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে সংশ্নিষ্ঠদের প্রতি
রুলও জারি করেন হাইকোর্ট।

জি কে শামীমের জামিনের লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয় গত ১২
ফেব্রুয়ারি। এই দুই মামলায় জামিননামা ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল
করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের
অভিযোগে আরও দুটি মামলা থাকায় তিনি এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন
অ্যাডভোকেট শওকত ওসমান।

গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের ১১৩ নম্বর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়
জিকে শাশীমকে। এরপর নিকেতনে তার জি কে বিল্ডার্স অফিসে (১৪৪ নম্বর) অভিযান
চালিয়ে ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজ ও নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ
টাকা জব্দ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এছাড়া তার জিম্মা
থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দেহরক্ষীদের ৭টি শটগান-গুলি এবং কয়েক বোতল বিদেশি
মদ জব্দ করা হয়।

শনিবার আদালত সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্র সমকালকে জি কে শামীমের জামিনের
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দৈনন্দিন কার্য তালিকায়
দেখা গেছে, জি কে শামীমের জামিন আবেদনটি এস এম গোলাম নামে ১৩৫ নম্বর আইটেম
হিসেবে ছিল।

তবে সংশ্লিষ্ঠ বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান জানিয়েছেন, এমন
খবর তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেতে শুনেছেন। রোববার এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জি কে শামীমের আইনজীবী শওকত ওসমান সমকালকে আরও জানান, জি কে শামীম অস্ত্র
মামলায় জামিন পাওয়ার পাশাপাশি হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ থেকে গত ৪
ফেব্রুয়ারি মাদক মামলায় জামিন পেয়েছেন। এ মামলায় তার পক্ষে আরও কয়েকজন
সিনিয়র ছিলেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, জি কে শামীম একজন ভালো লোক। তার পক্ষে
সমকালে লেখার অনুরোধ করেন এই আইনজীবী।

এর আগে গত ২ জানুয়ারি অস্ত্র মামলায় জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর
বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল
কায়েস। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ
আদালতে বদলি করা হয়। গত বছরের ২৭ অক্টোবর জি কে শামীমসহ তার সাত দেহরক্ষীর
বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় র‌্যাব।

অস্ত্র মামলায় দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, জি কে শামীম একজন চিহ্নিত
চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়া ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তার
দেহরক্ষীরা উচ্চ বেতনভোগী। তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে
প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে
বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল ও গরুর
হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।

জি কে শামীমের চার দেহরক্ষী কীভাবে, কোন যোগ্যতায় অস্ত্রের লাইসেন্স
পেয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। অস্ত্র ও অর্থ পাচারের মামলায় এই চার
আসামির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম
তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩
মার্চ আদেশ দেন। একই সঙ্গে দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, কামাল
হোসেন ও সামশাদ হোসেনের আয়কর রিটার্নের তথ্য আদালতে দাখিল করতে আসামিপক্ষের
আইনজীবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

জি কে শামীম অস্ত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদক ব্যবসা ও
মানিলন্ডারিং করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, অর্থ পাচার ও জ্ঞাত
আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মোট চারটি মামলা হয়।

গত বছরের ২১ অক্টোবর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জি কে শামীমের
বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় শামীমের বিরুদ্ধে
২৯৭ কোটি ৯ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগ আনা হয়।