অনলাইন ডেস্ক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী ভয়াবহ অপতত্পরতা চালানোর ছক তৈরি করেছে বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশ। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে-পরে বা নির্বাচনের সময় বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। আর এ অপতত্পরতা সফল করতে টার্গেট কিলিং, গুরুত্বপূর্ণ কিংবা বড় বড় স্থাপনা এবং গার্মেন্টস কারখানায় হামলার পরিকল্পনা রয়েছে।

আর টার্গেট কিলিংয়ের আওতায় রয়েছেন মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ ঘরোনার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার নেটওয়ার্কে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে এমন নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করার সক্ষমতা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে বলে শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকটা গুমট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই অবস্থার পরিবর্তন হোক বা না হোক, চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘটতে পারে যেকোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা। ঘটতে পারে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও।

এর মধ্যে টার্গেট করা হতে পারে ভিআইপিদের। কারা কারা টার্গেট হতে পারেন, এমন কোনো তালিকা প্রকাশ না হলেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিহত করতে সরকারকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সতর্কবার্তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৩-১৪ সালের চেয়েও ভয়াবহ নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা চালাচ্ছে একটি মহল। একই সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায় তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী তাণ্ডবলীলা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ দুই সহস্যাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে যেসব অনুপ্রবেশকারী জামায়াত-শিবির এবং একাত্তরের পাক বাহিনীর সহায়তায় গঠিত শান্তি কমিটির সন্তান-স্বজনরা এবার মরণ কামড় দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কট্টরপন্থী জামায়াত যারা খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব মেনে নিতে না পেরে জামায়াত ছেড়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ষড়যন্ত্র সফল করতে তাদেরও একত্রিত করতে কাজ করছে জামায়াত-বিএনপির এক শ্রেণির নেতারা। টাকা দিয়ে এসব জঙ্গিদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর কাজ করছে জামায়াত। আর এ কাজটি রাজধানী থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত করা হচ্ছে।

আর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের একটি অংশ জামায়াতের আদর্শপুষ্ট। তারা সরকারের থেকে নানা সুবিধা ভোগ করলেও ভিতরে ভিতরে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। নানা গোপন তথ্য দিয়ে তারা ষড়যন্ত্রকারী মহলের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারও এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিশেষ করে জামায়াত থেকে যারা বিএনপিতে গেছে তারাই বেশি তত্পর। ষড়যন্ত্র সফল করতে সব অপশক্তি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বলেও গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে। এছাড়া সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া কিছু সংখ্যক জঙ্গি স্বীকারোক্তিতে উপরিল্লিখিত ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তুলে ধরেছে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে উক্ত ষড়যন্ত্রকারী মহল। আর এই শ্বেতপত্রে এমপি ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা তথ্য এমনভাবে তুলে ধরা হবে তা দেশবাসী সহজে বুঝতে পারবে না। এতে জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়বেন। এ কাজে সহযোগিতা করছে সচিবালয় ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সমর্থিত এক শ্রেণির কর্মকর্তা। তারাও বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। তাদের তালিকাও গোয়েন্দাদের হাতে। এসব কর্মকর্তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত দাবি করে পদোন্নতিসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। মনিটরিং করতে গিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নেটওয়ার্কে বিষয়টি উঠে এসেছে।

গত দুই বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। ব্লগার থেকে শুরু করে শিক্ষক, বৃদ্ধ পুরোহিত, ধর্মযাজক, নিরীহ হোমিও চিকিত্সক, দর্জি, মুদি দোকানী, সুশীল সমাজের কতিপয় ব্যক্তি এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাও বাদ যাচ্ছেন না। তবে নির্বাচন সামনে রেখে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা ভিন্নতর। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে এই আশঙ্কা তত বাড়ছে। শেখ হাসিনাকে জঙ্গিরা টার্গেট করেছে এর আগে বেশ কয়েকবার। তাকে হত্যা করার লক্ষ্যে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাও চালানো হয়েছে। এছাড়া তাকে আরও বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করেছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাকেও টার্গেট করা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তারও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রী-এমপি, শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের টার্গেট করেছে ওই মহলটি। বড় বড় স্থাপনার পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্থার দাবিতে আন্দোলনের ক্ষেত্রেও উল্লিখিত ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র ছিল। তবে এটি এমন সুক্ষ্মভাবে করা হয়েছে যে, বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী তা বুঝতে পারেনি।

সন্ত্রাসী, জঙ্গি দমনে সরকার লাগাতার কঠোর কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোর তত্পরতা চালানোর কারণেই তারা এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জামায়াতসহ ধর্মীয় কয়েকটি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে না থাকলেও এরা আদর্শিকভাবে জামায়াতের এবং নিকট অতীতে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী, জঙ্গিগোষ্ঠী যাতে কোনো হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য তারা বিশেষভাবে সতর্ক থেকেই কর্মপন্থা স্থির করছেন। বর্তমান এমপিসহ সম্ভাব্য জনপ্রিয় প্রার্থীদের তালিকা করে তাদের ওপর নজরদারি রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হিটলিস্টের তালিকায় তারা থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরকারদলীয় ১৪ দলের শরিক এমপিদের চলাচল, তাদের তত্পরতার ওপর বিশেষ খেয়াল রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারদলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়া রেলওয়ে স্টেশন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সকল বিমানবন্দর, লঞ্চ ও বাস টার্মিনাল এলাকাসহ বড় বড় বিপণিবিতান এবং বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। কেপিআইসমূহে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ইত্তেফাককে জানান, ২০১৩-১৪ সালে তারা তান্ডবলীলা চালিয়েছিল। সেটা প্রতিহত করেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে সর্বশক্তি দিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে। এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, অনেক অপপ্রয়াস দেখেছি, নতুন নয়। অপপ্রয়াস কিভাবে মোকাবেলা করতে তা আমাদের জানা আছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স এন্ড স্পেশাল এ্যপেয়ার্স) মনিরুজ্জামান জানান, এ ধরনের অপতত্পরতা সম্পর্কে আমরা অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং তাদের মনিটর করা হচ্ছে।

পুলিশের আইজিপি মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারি জানান, নাশকতা চালিয়ে কেউ জনসমর্থন আদায় করতে পারে না। এ ধরনের অপতত্পরতা রোধে পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে। জনগণের যানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত বলে তিনি জানান।

ইত্তেফাক