গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী সংবাদদাতা: পটুয়াখালীতে বাঁশ-বেত, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
তৈরীতে নিয়োজিত কারিগরদের দুর্দিন চলছে। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ
গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার
করলেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিক। গ্রামীন জীবনযাত্রায় যেন
অস্তিত্ব নেই বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি জিনিসের। তাই এই শিল্পের কদর আর চাহিদা
দুটোই কমেছে। ক্ষুদ্র বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই পূর্ব পুরুষের রেখে
যাওয়া আদি পেশা বদল করে যুক্ত হয়েছেন অন্য পেশায়। কেউবা আবার জড়িয়েছেন
কৃষি কাজে।
জানা যায়, এক যুগ আগেও জেলার কয়েকশ’ পরিবার বাঁশ-বেত দিয়ে গৃহস্থালি ও
শৌখিন নানা পণ্য তৈরির কাজ করতেন। বাড়ির আশপাশের ঝাড় থেকে তরতাজা
বাঁশ-বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকম পণ্য। এসব বিক্রি করেই চলতো
তাদের সংসার। তবে বর্তমানে হাতে গোনা কিছু পরিবার এই শিল্পটি ধরে
রেখেছেন। সাপ্তাহিক হাটের দিন গ্রামের বাজারে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি
জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা।
গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা পরেশ
দাস (৫৫) বলেন, এই দুর্দিনে উপজেলায় হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার
বাঁশ-বেত শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছি। অনেকে এ পেশা বদলে অন্যপেশায় গেলেও
পূর্বপূরুষের এই পেশাকে ছাড়তে পারেননি গুটিকয়েক মানুষ। পণ্য নিয়ে
পৌরশহরের বাজার সহ গ্রাম-গঞ্জে ঘোরাফেরা করলে কিছু শৌখিন মানুষ শখ করে
তাদের পণ্য কেনেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে তরিতরকারি কিনে বাড়ি
ফেরেন তারা।
গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলা গ্রামের
বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগর জয়দেব সাধু (৫৮) বলেন, বাঁশের তৈরি জিনিসের
স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়ায়
গ্রামের সাধারণ মানুষ অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহারে
অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
আলো রানী নামের আরেক নারী কারিগর বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশ শিল্প টিকিয়ে
রাখতে ধার-দেনা করে ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোনরকমে টিকে আছি। অল্প
লাভে ঋণ দেয়া হলে এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
কলাগাছিয়া ইউনিয়নের খারিজ্জমা গ্রামের নিপা রানী বলেন, কয়েক বছর হলো
পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দর্জির কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, বাঁশ-বেত
শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন দর্জির কাজ করি, দিন
শেষে তিন থেকে চারশ টাকা রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলছি। যেদিন
কাজ না থাকে সেদিন অনেক কষ্ট হলেও আগের চেয়ে ভালো আছি।