বাবাও তার বুকে সঙ্গে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন
ডুবুরিরা পদ্মার তলদেশ থেকে তুলে নিয়ে আসলো দুটি লাশ। একে-অপরকে জড়িতে ধরে ছিলো তারা। তাদের পরিচয় বাবা-মেয়ে। দেখে মনে হবে মৃত্যুর সময়ও পরম নির্ভরতার স্থান বাবার কোল ছাড়তে চায়নি আদরের সন্তান।
বাবা শামিম হোসেন (৩৫) ও মেয়ে রোশনি খাতুন (৭) শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর পদ্মায় ডুবে যাওয়া বর-কনে যাত্রীবাহী নৌকায় ছিলো। নৌকা দুটিতে থাকা আর অনেকের মতোই তলিয়ে যায় তারা। পরে শনিবার (৭ মার্চ) বিকেলে তাদের লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পদ্মার তলদেশ থেকে ডুবুরিরা তুলে নিয়ে আসেন শামিম হোসেন ও রোশনি খাতুনকে। সে সময় মেয়েকে বাবার লাশ জড়িয়ে ধরে থাকতে দেখা যায়। বাবাও তার বুকে সঙ্গে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন। উদ্ধারের পর তাদের আলাদা আলাদা করে দু’টি ব্যাগে রাখা হয়।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুরে ওই নৌকাডুবির ঘটনায় শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ৪১ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৮ জনকে উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনকে মৃত ও ৩২ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। আজ রাত ১০টা পর্যন্ত উদ্ধার কার্যক্রম চলবে।
নৌকাডুবিতে নিহত ছয়জনের মধ্যে বাকি চারজন হলো-থেকে মনি খাতুন (৩০), একলাস আলী (২২), রতন আলী (৩০) ও মরিয়ম খাতুন (৫)।
এ ঘটনায় এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলো-পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহীন আলী মেয়ে ও কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০), কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন (১৩) ও খালা আঁখি খাতুন (২৫)।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ জানান, শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ডুবুরিরা শামিম হোসেন ও তার মেয়ে রোশনি খাতুনের লাশ উদ্ধার করেন। এদিন সকালে চারঘাট উপজেলা সংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে মনি খাতুন (৩০) নামের এক নারী এবং দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একলাস আলী (২২) ও আড়াইটার দিকে রতন আলী (৩০) নামের দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। নৌকাডুবির পরপরই শিশুর মরিয়মের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বিয়ের পর বউভাতের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির পরে কোনোরকমে সাঁতরে পাড়ে উঠে প্রাণে বেঁচে আছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৫)। তবে নিখোঁজদের তালিকায় রয়েছে কনে সুইটির নাম। বৃহস্পতিবার রুমন-সুইটির বিয়ে হয়। শুক্রবার তাদের ছিল বৌভাতের অনুষ্ঠান।
পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানের দুই নৌকায় ৪১ জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে ১৭ জন নারী ও ছয়জন শিশু। বাকিরা সবাই পুরুষ। নৌকাডুবির ঘটনার পর ওই দিক দিয়ে যাওয়া বালুবাহী একটি ট্রলার বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করে। আর কয়েকজন সাঁতার কেটে পাড়ে চলে আসে।