দর্পণ ডেস্ক : দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই যাত্রার অভিজ্ঞতা খুব বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে যদি বিমানবন্দরেই মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এমনিতেই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে বলা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় একের পর পর লম্বা লাইন। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাকে পাসপোর্ট দেখাতে হবে।

শুরুতে এয়ারলাইন কোম্পানির চেক-ইন কাউন্টারে, লাগেজ দিতে গিয়ে এক দফা, নিরাপত্তার ধাপ পার হতে গিয়ে একবার, তারপর ইমিগ্রেশন বা পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণে গিয়ে এবং একদম শেষে বিমানে চড়ার আগে বোর্ডিং গেটে। বেশিরভাগ বিমানবন্দরে এই ধাপগুলোতে একবার করে পাসপোর্ট বের করতে হয়।

কোন কোন দেশের বিমানবন্দরে এর মধ্যে আগে পরে আরও ধাপ থাকে। গন্তব্যে পৌঁছেও রয়েছে আরো একাধিক ধাপ। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী বিমান যাত্রী বাড়ছে। তাই বিমান যাত্রাকে সহজ করার চেষ্টা চলছে ধীরে ধীরে পাসপোর্ট চেকিং ব্যবস্থা তুলে দিতে। বিশ্বের সবচাইতে ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো এক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি ঝুঁকছে ফেসিয়াল রিকগনিশন বা চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তির দিকে। যেমন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ যুক্তরাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রায় এবং যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক বহির্গমনের ক্ষেত্রে চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর লন্ডনের হিথ্রো। সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হওয়ার সময় যাত্রীদের ছবি তুলে নেয়া হচ্ছে। বিমানে ওঠার সময় আরেকটি ছবি তোলা হচ্ছে। এরপর কম্পিউটারে সফটওয়ার দিয়ে দুটি ছবি মেলানো হয়। প্রথম ছবিটির সাথে দ্বিতীয়টি মিলে গেলেই ধরে নেয়া হচ্ছে সঠিক যাত্রী সঠিক বিমানেই উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে চেক-ইনের সময় নেয়া তথ্যের সাথে নিমিষেই মেলানো হচ্ছে ছবি, আঙুলের ছাপ, পাসপোর্ট ও ভিসার তথ্য। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ডিজিটাল এয়ারপোর্ট নকশার ব্যবস্থাপক রাউল কুপার বলেছেন, এর মাধ্যমে ২৪০ যাত্রীর বিমানে চড়তে যা সময় লাগে তা অর্ধেক করে ফেলা সম্ভব। কোন যাত্রী সময়মতো বোর্ডিং গেটে না এলে বা হারিয়ে গেলে এই প্রযুক্তি দিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।

সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে একই ধরনের চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা বিমানবন্দরে ইতিমধ্যেই চেক-ইন কাউন্টার ছাড়াই যাত্রী ও লাগেজ চেক-ইন করার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। এমনকি ইমিগ্রেশন ও বিমানে ওঠার সময়ও সেই ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে কেউ আপনার পাসপোর্ট বা ভিসা চেক করবে না। আপনি নিজেই কোন একটি যন্ত্রে বারকোড দিয়ে সব করে নিতে পারবেন। দুবাই বিমানবন্দর যেন আরও এক ধাপ আগে গিয়ে চিন্তা করছে। তারা নিরাপত্তা ডেস্ক এর বদলে অ্যাকুরিয়ামের মতো কাচ ঘেরা টানেল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে ৮০টির মতো চেহারা শনাক্তকরণ ক্যামেরা বসানো থাকবে। যেগুলো থাকবে খেলনা মাছের মধ্যে। টানেলের মধ্যে দিয়ে যাত্রীদের ডিপারচার গেটের দিকে যেতে হবে। তখন ক্যামেরায় নানা দিক থেকে তাদের ছবি তোলা হতে থাকবে। সেই ছবি ডাটাবেজে থাকা পাসপোর্ট, ভিসা ও অন্য ছবির সাথে সফটওয়ার দিয়ে মিলিয়ে নেয়া হবে। এসব প্রকল্পে জড়িতরা বলছেন, একদিন হয়তো বিমানবন্দরে একবারও পাসপোর্ট বের করার দরকার পড়বে না।