অনলাইন ডেস্ক : নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার মো. জনি (৩৮)। আঁঁতকে উঠার মতো বর্ণণা দিয়েছেন জনি। এই হত্যাকান্ডে জনি ছাড়াও চালক জামাল হোসেন ও সহকারী ফয়সাল জড়িত। ভোর বেলা বাথরুমে যেতে বাস থেকে নামেন পায়েল। এর মধ্যে বাস ছেড়ে দেয়। দৌঁড়ে বাসে উঠার চেষ্টা করে পায়েল। দরোজায় ধাক্কা লেগে ছিটকে নিচে পড়ে। নাকে মুখে আঘাত পেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এ সময় তাকে চ্যাংদোলা করে পাশের খালে ফেলে দেয় বাসের তিন স্টাফ। সেখানে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় আহত পায়েলের।

বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার তিনজনকেই গ্রেফতার করেছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানা পুলিশ। এদের মধ্যে জনি গতকাল বুধবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের ৫ নম্বর আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জসিম উদ্দিনের খাস কামরায় তিনি জবানবন্দি দেন।

কোর্ট ইন্সপেক্টর হেদায়েতুল ইসলাম ভূইয়া ও গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার মো. জনির বরাত দিয়ে জানান, গত শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার ভাটেরচরের কাছে যানজট সৃষ্টি হয়। এই সময় পায়েল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাস থেকে নামে। এর মধ্যেই জ্যাম ছুটে যায় এবং গাড়ি চলতে শুরু করে। পায়েল গাড়ির পেছন পেছন দৌঁড়াতে থাকে। পরে গাড়িও থামায়। গেটের সামনে থাকা পায়েল অটো গেট খুলতেই ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এতে পায়েলের মুখে ও নাকে আঘাত লেগে রক্ত ঝড়তে থাকে। অজ্ঞান হয়ে যায় পায়েল। সুপারভাইজার চালককে ঘটনা জানায়। পরে চালক, সহকারী ও জনি তিনজনে পরামর্শ করে পায়েলকে গাড়িতে না তুলে চেংদোলা করে নিয়ে সামান্য দূরের ভাটেরচর ব্রিজের ওপর থেকে খালে ফেলে দেয়। তখন ভোর প্রায় সাড়ে ৪টা। যাত্রীরা সবাই তখন ঘুমে।

ওসি জানান, পায়েল জীবিত ছিল। এর স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে- পায়েল মৃত্যুর আগে ১০ থেকে ১৫ কেজি পানি খেতে খেতে ডুবে যায়। তার পেটে পানি ছিল। ময়না তদন্ত এবং সুরহতাল রিপোর্টেও তা উল্লেখ রয়েছে। এর আগে জনিকে মঙ্গলবার ঢাকা থেকে আটক করে গজারিয়া থানা পুলিশ। পরে সে পুলিশের কাছে সব স্বীকার করে।

ওসি জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে তিনজনকে আসামী করে গজারিয়ায় থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলাটির বাদী হয়েছেন পায়েলের মামা গোলাম সোরয়ার্দী বিপ্লব। মামলা দায়েরের পর পায়েলের লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম রওনা হয়। ভোর সাড়ে ৩টায় পায়েলের লাশ চট্টগ্রামের হালিশহরে বাড়িতে নিয়ে গেলে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরে সকাল ৮টায় নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় হালিশহরে বি-ব্লকের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার মো. জনি খুলনার খানজাহানআলী উপজেলার শিরোমনি (শাহবাড়ি) গ্রামের মো, ইসমাইলের পুত্র। সে ঢাকার আমিন বাজারে বসবাস করতো।

গত সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নীচের খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সাইদুর রহমান পায়েল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। সে চট্টগ্রামের হালি শহরের গোলাম মাওলার পুত্র। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে পায়েল সবার ছোট। বাবা ও বড় ভাই কাতারে চাকুরী করেন। মা কহিনুর বেগম গৃহিনী। পরিবারটিতে চলছে এখন শোকের মাতম।