ফাতেমা ডেইলি বাংলাদেশ বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছি। আমি কারো উপর বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। আমি অনেক সংগ্রাম করছি। তবে আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে মাশরুম।
অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, মাশরুম কীভাবে ফাতেমার জীবনকে বদলে দিয়েছে? চলুন সেই গল্পটি জানিয়েছেন ফাতেমা নিজেই। মাশরুম চাষ করেই ফাতেমা নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, আমি একজন সফল মাশরুম কৃষক।
সাভারের জামসিং গ্রামে ফাতেমার বসবাস। সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ২২ বছরের ফাতেমা আক্তার। অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন ফাতেমা। ফাতেমার মাত্র ১০ বছর বয়সেই তার বাবা ছোট ভাই ও তার মাকে ছেড়ে চলে যায়। তিনি অন্য জায়গায় সংসার শুরু করেন।
এরপর কঠিন সময় পার করতে থাকেন মা, মেয়ে ও ছোট ছেলেটি। ফাতেমার মা একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের আয়া হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই সামান্য উপার্জন দিয়েই প্রতিবন্ধী মেয়েকে ও ছোট ছেলেকে মানুষ করেন ফাতেমার মা।
তার ছোট ভাই দিনমজুর। দারিদ্রতা ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ফাতেমা পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডিও পার হতে পারেনি। দিন যত এগিয়ে যেতে থাকে ততই সে পরিবারের উপর বোঝা হয়ে পড়ে। মা ও ছোট ভাই তার দায়িত্ব নিতে চায়নি। অতঃপর ফাতেমা নিজ ঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে তার খালার কাছে আশ্রয় নেন।
নিজের প্রতিবন্ধকতাকে স্মরণ করে ফাতেমা বলেন, আমার বয়স তখন ১৫ বছর। মায়ের কাছ থেকে সেলাই মেশিনের কাজ শিখি। এরপর থেকে বাড়িতে বসেই আমি পোশাক তৈরি করে মাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা রোজগার শুরু করি। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বেশিক্ষণ মেশিনে বসেও থাকতে পারতাম না। এ কারণে জীবিকা নির্বাহের জন্য আমি অন্য কাজ শুরুর কথা চিন্তা করছিলাম।
ঠিক তখনই এ্যাক্সেস বাংলাদেশ নামক এক এনজিও সংস্থার দৌলতে এক আশার আলো দেখ পাই। এই সংস্থার মাঠপর্যায়ের এক প্রতিনিধি আমার বাড়িতে আসেন। তারা প্রতিবন্ধীদের মাশরুম চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন বলে জানান। তিনি আমাকে চাষের বিষয়ে উৎসাহিত করেন।
এরপর আমি আগ্রহ নিয়ে প্রশিক্ষণটি গ্রহণ করি। খালার বাড়ির পাশেই মাশরুম চাষের ব্যবস্থা করি। ফাতেমা জানায়, মাশরুম চাষে তার মোট ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন তিনি মাশরুম ব্যবসার পাশাপাশি সেলাই মেশিনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। প্রতিমাসে অন্তত সাত থেকে আট হাজার টাকা উপার্জন করেন এই সংগ্রামী নারী।