অনলাইন ডেস্ক :

একদিকে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করা মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন হচ্ছিল। অন্যদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে সকাল থেকে মহামিছিলে অংশ নিয়ে হাজারো ফিলিস্তিনি গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের সুরক্ষিত সীমান্তবেড়া অতিক্রম করার চেষ্টা করছিল। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাত করা এলাকায় প্রত্যাবর্তনে হামাসের নেতৃত্বে ওই মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল।

সোমবার একদিকে যখন মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন হচ্ছিল, অন্যদিকে তখন ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ মিছিলে স্নাইপার দিয়ে গুলি চালাচ্ছিল ইসরায়েলি সৈন্যরা। এতে অন্তত ৫৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। ইসরায়েলের এ হামলায় আহত হয়েছে ২ হাজার ৭০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর এক দিনে এত বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি। হতাহত ব্যক্তিদের স্মরণে মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

মিসর অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করে হত্যা করছে। তুরস্কও এই ঘটনাকে হত্যাযজ্ঞ বলে বর্ণনা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার জেইদ বিন রাদ জেইদ আল হুসেইন বলেছেন, এমন জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

এদিকে ঘটনার পরপরই জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গাজায় যা ঘটছে তাকে বর্বরোচিত আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইসরায়েল স্বাগত জানালেও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছে।

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। পূর্ব জেরুজালেমে দু’লাখ ইহুদির জন্যে বসতি গড়ে তুলেছে দেশটি। অবশ্য আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ।

এক সময় জেরুজালেমে বহু দেশের দূতাবাস ছিলো। কিন্তু ১৯৮০ সালে ইসরায়েল জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করার পর দেশগুলো সেখান থেকে তাদের দূতাবাস সরিয়ে নেয়। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ট্রাম্পের ঘোষণার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প, জামাতা জ্যারেড কুশনারসহ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। নেতানিয়াহু এটিকে ইসরায়েলের জন্য একটি ‘গৌরবময়’ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

অন্যদিকে এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, জেরুজালেমই যে ইসরায়েলের রাজধানী এটি স্বীকার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে ব্যর্থতা দেখা গেছে। তবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্য শান্তির ব্যাপারে অনেক তিনি আশাবাদী। সূত্র: বিবিসি।