শিক্ষার্থীদের প্রতিরাতে দিতে হবে ৭১ টাকা অন্যদিকে চাকরিপ্রত্যাশী হলে ২৯৯ টাকায় এ হোটেলে থাকতে পারবেন যেকোনও নারী
সদ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন যশোরের শিরিন মণি, প্রায়ই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিতে আসেন রাজধানী ঢাকায়। পরীক্ষাগুলো সাধারণত সকালের দিকে হওয়ায় পরীক্ষায় শেষেই থাকে যত দ্রুত সম্ভব বাস ধরে বাড়ি ফিরে যাওয়ার তাড়া।
বাসস্থান সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তির যেন কোনও শেষ নাই তার। এ প্রসঙ্গে শিরিন বলেন, “কোনও চাকরির পরীক্ষা থাকলে রাতে ঢাকায় যাই, পরীক্ষা শেষে দ্রুত আবারও যশোরে রওনা হই। কেননা দু’একদিনের জন্য হোটেলে থাকার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা আমার নেই।”
শুধু শিরিন নয়, এ ধরনের আবাসন সমস্যার মুখে পড়তে হয় কোনও কাজে ঢাকায় আসা কিংবা কোথাও বেড়াতে যাওয়া সকল নারীকেই। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে, কেননা, সারাদেশের তুলনায় রাজধানীতে আবাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, নিরাপত্তা সংকটতো রয়েছেই।
এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করা ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে কেবল নারীদের জন্য নির্মাণ করেছে “বাসন্তী নিবাস”, একটি হোস্টেল। যেখানে কেবল ৭১ টাকায় মিলবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নারীদের থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তাসহ সকল আবাসন সংকটের সমাধান।
১৭শ’ বর্গফুটের এই হোটেলটির ১৮টি বাংক বেডে (দ্বিতল শয্যা) প্রতিরাতে দুইজন করে থাকতে পারবেন মোট ৩৬ জন নারী। শিক্ষার্থী হলে প্রতিরাতে গুণতে হবে মাত্র ৭১ টাকা, চাকরিপ্রত্যাশী হলে ২৯৯ টাকা, এর বাইরে যে কোনও নারীকে ৮৮০ টাকা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, হোস্টেলটিতে সকালের নাশতায় কোনও খরচই লাগবে না, মাত্র ৪০ থেকে ৭০ টাকায় পাওয়া যাবে দুপুর ও রাতের খাবার। এছাড়াও ওয়াইফাই কানেকশন, এসিসহ অত্যাধুনিক বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।
এরইমধ্যে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় সকল নারীদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। নাসরিন সুলতানা নামে এক নারী ফেসবুকে বলেন, “অসম্ভব ভাল একটি উদ্যোগ। এধরনের উদ্যোগ আরও নেওয়া প্রয়োজন।”
এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরও। তিনি বলেন, “স্বল্প আয়ের পরিবারের নারীদের জন্য বাসন্তী নিবাস একটি অসাধারণ উদ্যোগ।”
বাসন্তী নিবাসের ব্যবস্থাপক রহিমা আখতার বলেন, “অনেক নারীরই ঢাকায় কোনও আত্মীয়স্বজন নেই, সেক্ষেত্রে জরুরি কোনও অবস্থায় নিরাপদ কোনও বাসস্থান খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন, একইসঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়াও একটি সমস্যা। এসব বিষয় চিন্তা করেই নারীদের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগ নিয়েছে।”