অনলাইন ডেস্ক : অঞ্জলি লামা। ছেলে মানুষ। কিন্তু আচরণ মেয়েদের মতো। এ জন্য সমাজে তাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এমনকি তার স্কুলের বন্ধুরাও তাকে ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করে। বৈষম্য ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে।
নেপালের নয়াকোটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম অঞ্জলি লামার। আজ তাকে মডেলিং জগতে অনেকে চেনে। তিনি এখন নেপালের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মডেল। এ পর্যন্ত আসতে তাকে কঠিন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।

২০১৭ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে আয়োজিত ল্যাকমি ফ্যাশন সপ্তাহে অঞ্জলি লামা প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের একজন মডেল হিসেবে মঞ্চে ওঠেন। সমস্ত নির্যাতন আর কুসংস্কারকে পায়ে ঠেলে এগিয়ে যান। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিউইয়র্ক, মিলান, প্যারিসের র‌্যাম্পে হাঁটেন।

এর আগে ২০০৫ সালে অঞ্জলি লামা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি মেয়েদের পোশাক পরবেন। এরপর কাঠমাণ্ডুতে পড়াশোনার জন্য যান। সেখানে এলজিবিটি গ্রুপ ব্লু ডায়মন্ড সোসাইটির সঙ্গে অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেন। এতে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।

২০১০ সালে শরীরের কিছু অংশ অস্ত্রোপচার করেন। মডেলিংয়ের প্রতি তার ঝোঁক আরো বেড়ে যায়। ২০১৪ সালে তাকে নিয়ে ‘অঞ্জলি-লিভিং ইনসাইড সামওয়ান এলসেস স্কিন’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়।

অঞ্জলি বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমি ছেলেদের পোশাকের চেয়ে মেয়েদের পোশাক পরতেই বেশি পছন্দ করতাম। এ জন্য বৈষম্য ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমার পরিবার আমাকে দেখতে পারতো না। আমার ভাই বলতো তুমি কখনো আমাদের পরিবারে এসো না। আমি ভাবতাম কি করবো, নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করলেও পারিনি।

যাদের আত্মপরিচয় নিয়ে সমস্যা আছে তাদের প্রতি অঞ্জলির আহ্বান, নিজেকে প্রকাশ করুন, আপনি যা চান তার জন্য লড়াই করুন, লুকিয়ে থাকবেন না।

সম্প্রতি ওয়েব সিরিজের একটি সাক্ষাৎকারে এই মডেল জানান, তার একজন ভালবাসার মানুষ রয়েছে। কোনও না কোনও দিন বিয়ে করতেও চান।

ছেলে থেকে মেয়ে রূপান্তর হওয়ার আগে অঞ্জলি লামার নাম ছিল নবীন ওয়াইবা। বর্তমান তিনি মুম্বাইয়ে থাকছেন। এখন এলজিবিটি আন্দোলনের একজন পরিচিত মুখ।