দর্পণ ডেস্ক :
মালদ্বীপের কোচ পিটার সেগার্ট ফাইনালের একদিন আগে সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলেন, ‘ফাইনালে একটি সেনসেশন অপেক্ষা করছে।’ সত্যিই তার দল সেনসেশনটা দেখিয়ে দিল। দক্ষিণ এশিয়ার ফটুবল পরাশক্তি হয়ে ওঠা ভারতকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাফের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে মালদ্বীপ।
শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে দ্বীপ রাষ্ট্রটি। ২-১ গোলের দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে এক দশক পর সাফের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করল তারা। প্রথমবার তারা সাফের শিরোপা জয় করেছিল ২০০৮ সালে। সেবারও ফাইনালে এই ভারতকেই পরাজিত করেছিল ১-০ গোলে।
সাফের শুরুতে মালদ্বীপের পথচলা মোটেও মসৃণ ছিল না। তাদের পারফর্ম্যান্স দেখে হতাশ ছিলেন খোদ সমর্থকরাই। কেউ বিশ্বাসই করেননি মালদ্বীপ সাফের ফাইনাল খেলবে। কারণ গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল। এরপর ভারতের কাছেই ২-০ গোলে হারের লজ্জা পেতে হয় তাদেল। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পয়েন্ট ও গোল ব্যবধান সমান হওয়ায় টস ভাগ্যের সহায়তা নিয়ে শেষ চারে নাম লেখায় তারা।
অথচ সেই দলটিই কিনা সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠল। নিজেদের খোলস থেকে বেরিয়ে শিরোপা প্রত্যাশী নেপালকে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালের মহারণে নাম লেখায় মালদ্বীপ। আর শিরোপার মহামঞ্চে অতি আত্মবিশ্বাসী ভারতকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ঠিকই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে তারা।
শুরুতে কোনো দলকেই দেখা যায়নি উল্লেখ করার মতো আক্রমণ রচনা করতে। ম্যাচটি ফাইনাল বিধায় হয়তো উভয় দলই কিছুটা সময় নিয়েছে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে একে অপরের অবস্থান বুঝে নেয়ার জন্য। ম্যাচের ১৯তম মিনিটে প্রথম আক্রমণেই সফল হয় মালদ্বীপ। বাম প্রান্ত দিয়ে হাসান নিয়াজের বাড়িয়ে দেয়া বল নিয়ে ডি বক্সে গিয়ে ভারতীয় গোলকিপার বিশাল কাইতের মাথার ওপর দিয়ে আলত টোকা দিয়ে বল জালে জড়ান মালদ্বীপের ফরোয়ার্ড মাহুদি হাসান।
তিন মিনিট পর ফের আক্রমণে যায় মালদ্বীপ। তবে এবার সতর্ক ভারতীয় ডিফেন্ডাররা বেশ দক্ষতার সঙ্গেই প্রতিহত করে মালদ্বীপের সংঘবদ্ধ আক্রমণটি। ২ মিনিট পর ডি বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে মালদ্বীপের ফরোয়ার্ড আলী ফাসির চমৎকার বাঁকানো শট নিলেও বলটি অল্পের জন্য ক্রস বার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। এরপর আবারো মধ্যমাঠে চলে যায় খেলা। ভারত গোল পরিশোধের জন্য এ সময় বেশ কয়েকটি কর্নার আদায় করলেও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়।
ম্যাচের ৩৯তম মিনিটে মালদ্বীপের অধিনায়ক আকরাম আবদুল ঘানি গুরুতর আহত হওযায় তাকে মাঠ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে পরিবর্তিত হিসেবে নামানো হয় আহমেদ নোমানকে। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে বিপজ্জনক ফাউলের কারণে বরং হলুদ কার্ড দেখতে হয় ভারতীয় অধিনায়ক সুবাশিষ বোসকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ভারত। শুরুতেই আক্রমণে যায় তারা। তবে এসব আক্রমণগুল ছিল বিচ্ছিন্ন। পরিকল্পনার কোন ছাপ ছিলনা আক্রমণে। ফলে গোলও আসেনি।
একপর্যায়ে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টায় অল আউট খেলতে শুরু করে ভারত। আর ওই সুযোগে প্রতি আক্রমণ থেকে ব্যবধান দ্বিগুনে নিয়ে যায় মালদ্বীপ। ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে মধ্য মাঠ থেকে হামজাদ মোহাম্মেদের বাড়িয়ে দেয়া বল ফাঁকায় পেয়ে ক্ষিপ্র গতিতে সেটি নিয়ে ভারতীয় গোল বক্সে ঢুকে পড়েন আলি ফাসির। এ সময় ভারতীয় গোল কিপার এগিয়ে এলে কিছুটা আড়াআড়িভাবে চলন্ত বলে মাটি কামড়ানো শটে এগিয়ে দেন তিনি। বলের গতির সঙ্গে দৌড়ে সেটি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ডিফেন্ডার শার্থাক গুলুই। কিন্তু এর আগেই ঠিকানা খুঁজে নেয় বল। এ সময় আগ্রাসী উদযাপনের জন্য হলদু কার্ড দেখতে হয় মালদ্বীপের ওই ফরোয়ার্ডকে।
ম্যাচের ইনজুরি টাইমে (৯০+২) সুমিত পাসির গোলে ব্যবধান কমায় ভারত। বাম প্রান্ত থেকে নিখিলের ক্রসের বলটি একেবারেই মালদ্বীপের গোলপোস্টের সামনে পেয়ে আলতো শটে গোল করেন পাসি (২-১)। এতে ব্যবধান কমলেও হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ভারতকে।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.