শঙ্কর নেত্রালয়

চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫৬ হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. গিরিশ শিবা রাও

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫৬ হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. গিরিশ শিবা রাও। এই রোগীর পরিমাণ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেওয়া বিদেশিদের ৬০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন তিনি। 

রবিবার (৮ মার্চ) হাসপাতালে বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান তিনি। 

এ সময় ডা. গিরিশ বলেন, প্রতিবছরই শঙ্কর নেত্রালয়ে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে এ সংশ্লিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান দেখাতে পারেননি তিনি।  

শঙ্কর নেত্রালয় ভারতের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় চক্ষু হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি। সেখানে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং ওমানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ চিকিৎসা নিতে যান। এমনকি এই হাসপাতালের ৭০ শতাংশ রোগীই তামিলনাড়ুর বাইরের। 

বাংলাদেশ থেকে কেন এতো রোগী শঙ্কর নেত্রালয়ে আসেন-এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডা. গিরিশ বলেন, এর কারণ হচ্ছে, এই হাসপাতালে খুব কম খরচে গ্লুকোমা, রেটিনা, অকুলোপ্লাস্টি, স্কুইন্ট, পেডিয়াট্রিক ক্যাটারাক্ট, কর্নিয়াল ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ বিভিন্ন জটিল অস্ত্রপচার করা হয়। 

প্রতি রবিবার হাসপাতালের সাত তলায় জেনারেল ওয়ার্ডে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। 

শঙ্কর নেত্রালয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে বাংলাদেশের কিশোর ইমতিয়াজ (১১)। চট্টগ্রামের ফাতিয়াবাদ হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সে। সদর নামের পরিবারের এক সদস্যের সঙ্গে চেন্নাইতে যায় ইমতিয়াজ। 

এ বিষয়ে সদর ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, এক বছর আগে ইমতিয়াজের মাথায় ফুটবলের আঘাত লাগে। কিন্তু সে সময় পরিবারের কাউকে এ বিষয়ে জানায়নি ইমতিয়াজ। এক বছর পর তার চোখের সমস্যা ধরা পড়ে। ইমতিয়াজকে চট্টগ্রাম ও ঢাকার চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে গেলে তারা জানায়, অস্ত্রোপচার করা হলে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ। এরপরই তাকে ভারতের শঙ্কর নেত্রালয়ে নিয়ে আসা হয়।  

সদর আরও জানায়, এই হাসপাতালে ইমতিয়াজের এক চোখে অস্ত্রপচার করেছেন চিকিৎসকরা। এতে খরচ এসেছে ৪২ হাজার রুপি। চোখে আরও একটি অস্ত্রপচার করা হবে। সেখানে খরচ পড়বে ৯০ হাজার রুপি। ইমতিয়াজের চোখ পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।  

শঙ্কর নেত্রালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৮ সালে এটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত হয়। হাসপাতালটি মূলত পরিচালিত হয় অনুদান ও রোগীদের চিকিৎসা ফি’র অর্থ থেকে। ভারতে যাদের মাসিক আয় ১২ হাজার রুপির কম তাদের এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়। বর্তমানে শঙ্কর নেত্রালয়ের সারা ভারতে একাধিক শাখা রয়েছে।