দর্পণ ডেস্ক :
ভারত থেকে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি এবং দুই দেশের রেল যোগাযোগ বাড়াতে গৃহীত পৃথক দুটি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে এর উদ্বোধন করবেন। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পর্যন্ত নবপ্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় সঞ্চালন বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে আসবে আমদানি করা ওই বিদ্যুৎ।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন গতকাল জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ভিডিও কনফারেন্সে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি ছাড়াও ভেড়ামারায় দ্বিতীয় সাব স্টেশন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন। সেখানে একটি সুধী সমাবেশ হবে।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের উপকারভোগী ছাড়াও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ওই অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জেলার বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
পররাষ্ট্র ও রেলমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ১৬ বছর পরিত্যক্ত থাকা কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লিঙ্ক ফের চালু করতে নেয়া সংস্কার প্রকল্প এবং আখাউড়া-আগরতলা নতুন রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। প্রকল্প দুটির বেশিরভাগ কাজ বাস্তবায়িত হবে ভারত সরকারের দেয়া ঋণ সহায়তায়।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে- ভারত থেকে এ পর্যন্ত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
আজ থেকে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরে সেটি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। ভেড়ামারা-বহরমপুর দ্বিতীয় হাইভোল্টেজ ডিরেক্ট কারেন্ট (এইচভিডিসি) প্রকল্পের পরিচালক কিউ এম শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইতিমধ্যে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) গত ৮ জুলাই গ্রিড লাইনটি পরীক্ষাও করেছে। ভারত থেকে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ২০১৬ সালের জুনে ১ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে গ্রিড লাইন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চলতি বছরের সূচনাতে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়ের গড় খরচের চেয়ে ভারত থেকে আমদানির খরচ অপেক্ষাকৃত কম।
এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নজনিত বিলম্ব হওয়ার জটিলতাও নেই। তাই দ্রুত বেড়ে যাওয়া বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিকে আপদকালীন সমাধান মনে করছে সরকার।

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লিংক পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে গৃহীত সংস্কার প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে কুলাউড়া রেলস্টেশনে স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের হুইপ এম সাহাবুদ্দিনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন চালু হয়েছিল। বড়লেখা উপজেলার লাতু সীমান্ত দিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন হয়ে আসাম রেলওয়ের ট্রেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসা-যাওয়া করতো।
কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনে চলাচলকারী ট্রেনটি এলাকাবাসীর কাছে ‘লাতুর ট্রেন’ নামে পরিচিত ছিল। রেললাইনটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তা সংস্কার না করেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালের ৭ জুলাই বন্ধ করে দেয়। ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা সফরকালে স্থানীয় ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় রেললাইন চালুর ঘোষণা দেন।
পরে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনঃসংস্কার প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
সেই প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য এরই মধ্যে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ফলক নির্মাণ এবং ভিডিও কনফারেন্সের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল বিকালে উদ্বোধনী মঞ্চ পরিদর্শন করেছেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, রেল পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম খন্দকার ও জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই পুনর্বাসন কাজ শেষ হলে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়ার ২৪টি চা-বাগানসহ ৪ উপজেলার মানুষের পণ্য পরিবহন ও বিপণনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে এলাকাবাসী জানান।
স্থানীয়রা জানান, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনে চলা এক সময়ের ‘লাতুর ট্রেন’ পুনরায় চালু হলে অত্র এলাকার মানুষের যাতায়াতের সমস্যা দূর হবে। একই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটবে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন শুধু মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীও : আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে ভিডিও কনফারেন্স হবে তাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকেও যুক্ত করা হচ্ছে। বিকালে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে সরাসরি অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেনের আমন্ত্রণপত্রে অনুষ্ঠানের এই তথ্য জানা গেছে।
এদিকে আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের ৩নং প্ল্যাটফরমে একটি বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষে এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
ওই সমাবেশে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
জানা গেছে, আখাউড়া থেকে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশে ১০ কিলোমিটার ও ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার। আখাউড়া থেকে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর পর্যন্ত হবে বাংলাদেশের রেললাইন।
আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত জানান, এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮০ কোটি রুপি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটারের জন্য প্রায় ৪৭৮ কোটি টাকা এবং ভারতের ৫ কিলোমিটার অংশের জন্য ৫৮০ কোটি রুপি। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্স মেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রকল্পের রেললাইন নির্মাণ করবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ১৮ মাস।
প্রকল্পটি নির্মাণ হলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথমদিকে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। পরবর্তীতে যাত্রী পারাপারের বিষয়ে দু’দেশের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।