অনলাইন ডেস্ক : টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের কৃষকদের বছরের একটা সময় সংগ্রাম করতে হয় বন্যার সঙ্গে। তখন বসতভিটা ছেড়ে অনেককেই চলে যেতে হয় অন্য জায়গায়। পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হয় বাড়িঘর মেরামত। এরপর শুরু হয় ধীরে ধীরে আবাদ। বন্যার কারণে খুব বেশি ফসল আবাদের সুযোগ পায় না চরাঞ্চলের মানুষ। তবে টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে দিন দিন ভুট্টা আবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবার অনেক কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে ভুট্টা চাষে। আবাদ শেষে ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজও প্রায় শেষের দিকে।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের বেশির ভাগ কৃষক তাদের জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করেছে। নিকরাইল ইউনিয়নের ভদ্রশিমুল, বাসুদেবকুল বোরারবয়ড়া, চরভরুয়া, চরতাড়াই, বলরামপুর, কুঠিবয়ড়া, রামাইল, নলছিয়া, জোকার চর, গাবসারা ইউনিয়নের রুলিপাড়া, গোবিন্দপুর, রামপুর, রায়ের বাসালিয়া অঞ্চলে ভুট্টার ফলন খুুবই ভালো হয়েছে। অর্জুনা ইউনিয়নেও ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া, দাইন্যা, সিলিমপুরের চরাঞ্চলে ভুট্টার ভালো আবাদ হয়েছে। নাগরপুরের মাহমুদনগরে ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়েছে। এ ছাড়া পাকুটিয়া, আগদিঘলিয়া, দপ্তিয়রের অনেক জমিতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল আলম বলেন, পাঁচ বছর আগে নাগরপুরে মাত্র ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। চলতি বছর আবাদ হয়েছে এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলায় দিন দিন ভুট্টা আবাদ বাড়ছে।

কৃষকরা জানায়, অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম এবং এতে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করলে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান হয়। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ৩০ থেকে ৩৫ মণ। ভুট্টা চাষে সেচ কম লাগে, সারের ব্যবহারও কম। এখন ভুট্টা মাড়াই শেষে ঘরে তোলা হচ্ছে। ভুট্টা আবাদ ভালো হলেও একটা আশঙ্কা কৃষকদের মনে বাসা বেঁধেছে—বাজারে সঠিক মূল্য পাওয়া যাবে কি না। ভূঞাপুরের চণ্ডিপুর গ্রামের চাষি মো. সায়েদ আলী বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হওয়ায় জমিতে ভুট্টা চাষ করি। যা আশা করছিলাম আবাদ সে রকমই হইছে। এতে খুব খুশি। গাবসারার কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি সাত বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এ বছর বিঘাপ্রতি ৩২ মণ হবে বলে আশা করছি।’ একই গ্রামের সায়েদ আলী বলেন, ‘এত ভুট্টার আবাদ এর আগে কখনো হয়নি। যেভাবে ভুট্টা চাষ হয়েছে যদি সে রকম দাম পাই তাহলে আমার ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর টাঙ্গাইল জেলায় ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৮৬০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৯০৫ হেক্টর। চলতি মাসের (এপ্রিল) মাঝামাঝি পর্যন্ত ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৯৯১ টন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবার টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে প্রচুর ভুট্টা আবাদ হয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি আমরাও এতে খুব খুশি। কৃষকদের জন্য এবার প্রণোদনা ছিল। সরকার থেকে তাদের বিনা মূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে। তা ছাড়া কৃষক যখন যে পরামর্শ চেয়েছে তা দেওয়া হয়েছে।’