অনলাইন ডেস্ক :‘মা’ এক শব্দেই তার পূর্ণতা। মা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক, মা মানেই হাজারো আবদার, মা হলো জাগতিক কিংবা পার্থিব সব শান্তির উৎস। সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্কের যে গভীরতা, তা আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা পরিবারই বলে দেয়। ইসলাম ধর্মের কোরআনে ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’ কিংবা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাবর্তীর দুই সন্তান গণেশ ও কার্তিকের মাতৃভক্তির পুরাণেও মায়ের প্রতি সম্মান-ভালোবাসার নজির আমরা পেয়েছি। তবে কালে কালে মাতৃত্ব, মায়ের প্রতি এই ভালোবাসা-শ্রদ্ধা, মাতৃত্বের বন্ধন ও নারী অবদানকে সম্মান জানাতে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ‘মা দিবস’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে দিবসটি আজ পালিত হলেও একেক দেশে একেক সময় ধরে দিবসটি পালিত হয়।
১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন থেকেই এই দিনে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে এই দিনে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। কীভাবে হলো এই মা দিবসের প্রচলন! কথিত আছে, ব্রিটেনে প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রবিবারকে ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে পালন করা হতো। তবে সতেরো শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস, মায়ের সঙ্গে সময় দেওয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তার দিনটির কর্মসূচিতে। তবে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালের ২ জুনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। আরও আগের ইতিহাস বললে, দিবসটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবিলির উদ্দেশে পালন করা হতো একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুবের সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে উৎসবটি পালিত হতো। প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরও একটি ছুটির দিন ছিল। এদিন মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে নানা জিনিস উপহার দেওয়া হতো।
মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য, মাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া। যে মা জন্ম দিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন, তাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দিনটি পালন করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দিনটি পালন করা হয়। যেমন ফেব্রুারির দ্বিতীয় রবিবার নরওয়েতে, মার্চের চতুর্থ রবিবার আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্যে। আর বাংলাদেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। মা দিবসের প্রবক্তা আনা জার্ভিস দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অর্থ হলো, তাকে দুই কলম লেখার সময় হয় না। চকোলেট উপহার দেওয়ার অর্থ হলো, তা নিজেই খেয়ে ফেলা। আনা জার্ভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তার মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস সারা জীবন ব্যয় করেন অনাথ-আঁতুড়ের সেবায়। মেরি ১৯০৫ সালে মারা যান। লোকচক্ষুর অগোচরে কাজ করা মেরিকে সম্মান দিতে চাইলেন মেয়ে আনা জার্ভিস। অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার শুরু করেন। সাত বছরের চেষ্টায় মা দিবস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়।
বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অন্যান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে, তখন এ দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়। কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উৎসর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেই সব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মতো মায়েদের কার্নেশন (গোলাপি ফুল) এবং আরও অন্য উপহার দেওয়া হতো। অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প পরিচিত উৎসব, যা মূলত প্রবাসী মানুষরা পালন করে থাকে বা বিদেশি সংস্কৃতি হিসেবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে। সময়ের পরিবর্তনে আমাদের দেশের গণমাধ্যমেও পেয়েছে মা দিবসের ব্যাপক প্রসার, যা গেল কয়েক বছরে দেখা গেছে।