অনলাইন ডেস্ক : লিচু গ্রীষ্মকালীন মজাদার একটি ফল। ইংরেজি নাম লিচি। দিনাজপুর, রাজশাহী এবং পাবনা এ ফলের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া কুষ্টিয়া, বগুড়া, রংপুর, ময়মনসিংহ, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামেও ভালো জন্মে। তাই বলে কী অন্য জায়গায় হবে না, তা কিন্তু নয়। লিচুর আদি নিবাস চীনে। ওই দেশের বিজ্ঞানী ‘লাই চি’ এ গাছের প্রথম সন্ধানদাতা। সে হিসেবে অনেকেই মনে করেন, তার নাম থেকেই লিচুর নামকরণ। ফল সম্পর্কিত বিশ্বের প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১০৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাও লিচু নিয়ে লেখা। লিচুর আছে আরও অনেক গল্প-ইতিহাস। আগেকার রাজা-বাদশাহদের মন জোগাতে লিচু ছিল অনন্য। অষ্টম শতকে চীনের সম্রাট ‘হুয়ান সাং’ দক্ষিণ চীন থেকে লিচু এনেছিলেন উত্তর চীনে অবস্থিত তার রাজপ্রাসাদে। এর উদ্দেশ্য ছিল তার প্রিয়তমা সম্রাজ্ঞীকে খুশি করানো। বাংলার নবাবদেরও প্রিয় ফল ছিল। যে কারণে লিচুকে বলা হয় রোমান্টিক ফল। রসালো এ ফলটি দেখতে যেমন চমৎকার, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। লিচুর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাত রয়েছে। চায়না-থ্রি, বোম্বাই, মাদ্রাজি, মোজাফফরপুরী, মঙ্গলবাড়ী, বেদানা, এলাচি, কদমি, গুটি, কাঁঠালি, পূরবী আরও অনেক নাম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত্ম ৫টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপস্নাজম সেন্টার থেকে ৪টি জাত বের হয়েছে। এর মধ্যে আগাম, মৌসুমি এবং নাবী জাত সবগুলোই আছে। লিচুগাছে ফুল আসে ফেব্রম্নয়ারিতে আর ফল পাকে মে-জুনে। লিচুর খোসা খয়েরি কিংবা হালকা লাল হলে বুঝতে হবে ফল পরিপক্ব হয়েছে। সেই সঙ্গে খোসার কাটাগুলো চ্যাপ্টা হয়ে সমান দেখাবে। লিচু সংগ্রহের সময় কাঁচি কিংবা ধারালো ছুরি ব্যবহার করা উচিত। সিকেচার হলে সবচেয়ে ভালো হয়। বৃষ্টির সময় কিংবা এর পরপরই লিচু সংগ্রহ করতে নেই। এতে ফল পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডালের কিছু অংশ এবং পাতাসহ ফল কেটে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। অপরিপক্ব, নষ্ট ফল বাছাই করে ঝুড়িতে গুছিয়ে এরপর পরিবহন ও বাজারজাতকরণ।
লিচু পুষ্টিতে ভরপুর। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এর প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে (আহারোপযোগী) শর্করা ১৩ দশমিক ৬ গ্রাম, আমিষ ১ দশমিক ১ গ্রাম, লৌহ ০ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩১ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১ গ্রাম, পটাশিয়াম ১৭১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি১ ০ দশমিক ০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি২ ০ দশমিক ০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৩১ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬১ কিলোক্যালরি। লিচু ভেষজগুণেও টইটম্বুর। দেহের হৃদপি-কে সবল রেখে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এতে ফ্ল্যাভানয়েডস থাকায় স্ত্মন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কাশি, জিহ্বায় ঘা, মুখের শুষ্কতা, পেটব্যথা, জ্বরঠোসা, ব্রণ, বলিরেখা, কপালে ভাঁজপড়া, অ্যাজমা, অকাল বার্ধক্য এসবের জন্য বেশ উপকারি। লিচুতে ফাইট্রোকেমিক্যাল থাকায় চোখ ভালো রাখে। এ ছাড়া বায়ু, কফ ও পিত্তনাশক হিসেবে কাজ করে। লিচুতে কপার ও পটাশিয়াম থাকায় শরীরের কোষের জন্য হিতকর। দেহে অতিরিক্ত ওজন হ্রাসের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মস্ত্মিষ্ক বিকাশে সহায়তা এবং অতি বেগুনিরশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করার মতো গুরম্নত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে এ ফলের মধ্যে। বোলতার বিষের যন্ত্রণা কমাতে লিচুপাতার রস বেশ উপকারে আসে। এর বিচি চর্মরোগের মহৌষধ। এ ছাড়া লিচুর রস চাটনি এবং চকোলেট জাতীয় খাবারে ব্যবহার হয়। এখন লিচুর ভরা মৌসুম। তাই এত গুণে গুণান্বিত এ ফল ছোট বড় সবার খাওয়া দরকার।