এতদিন নিজেদের লেখা গীতিকবিতায় সুর বসিয়েছেন তারা। এবার সহযাত্রী করে নিচ্ছেন শ্রোতাদের। তাদের লেখা গীতিকবিতা নিয়ে তৈরি করবেন ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম। ক’দিন আগে এই ঘোষণা দিয়েছেন আভাস ব্যান্ডের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, গীতিকবিতা সংগ্রহের জন্য একটি ক্যাম্পেইনও করছেন ব্যান্ড সদস্যরা। ‘লিখবে তুমি গাইবে আভাস’- এমন স্লোগান নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে তাদের গীতিকবিতা সংগ্রহের কাজ। ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী তানযীর তুহীন বলেন, ‘দেশে অনেক মেধাবী লেখক আছেন, তারা হয়তো সুযোগের অভাবে নিজেদের সৃষ্টি তুলে ধরতে পারছেন না। ভালো গীতিকবিতার অভাবও চোখে পড়ছে। অনেকে ভালো লেখেন, কিন্তু সংকোচের কারণে বিষয়টি আড়াল করে রাখেন। তাদের জন্যই আমাদের এই ক্যাম্পেইন।’

তানযীর তুহীনের এ কথায় জানা গেল, কেন তারা এবার অন্যদের লেখা গীতিকবিতা থেকে গান তৈরি, পরিকল্পনা করেছেন। এও জানা গেল, গত কয়েক বছর তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদের ২শ’র বেশি গীতিকবিতা পেয়েছেন। সেসব গীতিকবিতা পাঠিয়েছেন, তাদের এও প্রশ্ন ছিল, আভাস তাদের লেখা নিয়ে কোনো গান করবে কিনা?
আভাসের সদস্যদের কথায়, তারা নিজেদের বাইরে কারও লেখা গীতিকবিতা নিয়ে গান করবেন না- এমন ঘোষণা আদৌ দেননি। যদি ভালো লেখা পাওয়া যায়, তাহলে গান তৈরি করতে আপত্তি নেই। কিন্তু এবার তারা যেটি করছেন, সেটি হলো শ্রোতাদের সঙ্গে একটি সম্পর্কের যোগসূত্র তৈরি করতে। যেখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে সবাই। আভাসের এই উদ্যোগে এরই মধ্যে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এই প্রচেষ্টায় আরও নতুন সুরের ভুবনে আরও নতুন কিছু উঠে আসবে- এমনও ইঙ্গিত ছিল অনেকের কথায়। তবে কতটুকু ভিন্নতা থাকছে আভাসের প্রথম অ্যালবাম ‘মানুষের আভাস’-এ তা জানতে শ্রোতাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তার পরও এটুকু আশা করা যায়, সমকালীন শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূরণে আভাস সদস্যরা চেষ্টার সবটুকু করে দেখাবেন। অন্তত ব্যান্ডের সদস্যদের কথায় এটা স্পষ্ট। এর প্রথম কারণ, গীতিকবিতা নির্বাচনে তারা পাশে পাচ্ছেন খ্যাতিমান গীতিকবি ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদকে। আরও থাকছেন তানভীর আলম সজীব। তাদের সঙ্গে ব্যান্ড সদস্যরা থাকছেনই। গীতিকবিতা নির্বাচন করা হয়ে গেছে, টানা আট মাস সুর-সংগীতের পেছনে ব্যয় করবেন ব্যান্ড সদস্যরা। তানযীর তুহীনের কথায়, ‘নিজস্বতা ধরে রেখে নতুন কিছু করতে গেলে এটুকু সময় লাগবেই। ইচ্ছা আছে সবকিছু শেষ করার পর বছরের শেষ প্রান্তে ‘মানুষের আভাস’ অ্যালবামটি প্রকাশ করার।’
যে সময়ে একক গানের আধিপত্য, ঠিক সেই সময়ে এসে অ্যালবাম করার ঘোষণা দেওয়া সাহসের বিষয়। আভাসের সদস্যরা সে সাহস দেখাতেই পারেন। কেননা, তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই আভাস দেশের সংগীতাঙ্গনে আলাদা একটি জায়গা করে নিতে পেরেছে। ‘মানুষ-১’, ‘আভাস’ এবং ক’দিন আগে প্রকাশিত ‘বাস্তব’ শিরোনামের একক গানগুলো অল্প সময়ের মধ্যে শ্রোতাদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে।

শ্রোতাদের কথায়, আভাসের গানগুলোয় যতটা ভিন্নতার ছাপ আছে, ততটাই আছে মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো কথা-সুর-সংগীতের মেলবন্ধন। যা থেকে প্রমাণ হয়েছে, আভাস সহজেই গানের ভুবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার নয়। শ্রোতাদের এই ভালো লাগা আর সমর্থন আভাসকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার প্রেরণা জোগাবে এ কথা বলা যায় নিদ্র্বিধায়। তাই আভাস ব্যান্ডের সদস্যরাই পারেন একক গানের পাশাপাশি অ্যালবাম করার সাহস দেখাতে পারেন। অবশ্য এই সাহসী উদ্যোগের পেছনে আছে ব্যান্ড সদস্যদের সংগীতাঙ্গনে দীর্ঘদিনের পথচলার অভিজ্ঞতা।

দলের কণ্ঠশিল্পী দুই দশক ধরে দেশের আলোচিত ব্যান্ড শিরোনামহীনের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সেই সুবাদে পেয়েছেন পরিচিতি, জনপ্রিয়তা আর অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা। দলের অন্যান্য সদস্যের অভিজ্ঞতার ঝুলিও একেবারে ফাঁকা নয়। তারা এর আগে কুহক, সেতার, ইকোস, অবসকিওরসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের মিউজিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই ২০১৭ সালে নতুন কিছু করার প্রয়াসে গঠন করেছেন আভাস। তাই বয়সের হিসেবে এখন চলছে আভাসে শৈশব, কিন্তু অভিজ্ঞতার বিচার ব্যান্ডের আয়োজনে থাকছে তারুণ্যের ছাপ। এটাই আভাসের প্রধান শক্তি। তাই আগামী দিনগুলোয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আভাস এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে- এমন প্রত্যাশা অনেকের মতো আমরাও করতে পারি।