অনলাইন ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে তাণ্ডবের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেছেন, “কোনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ভ্যান্ডালিজম চলবে না। ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ভাঙচুর করবে, এটা আমি বরদাস্ত করব না।”

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার বিকালে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার এই হুঁশিয়ারি আসে।

তিনি বলেন, “যদি কেউ ভাঙচুর করে, ভ্যান্ডালিজম করে… আমরা কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কাছে নির্দেশ রয়েছে- সে যে দলের হোক, যেই হোক, কাউকে ছাড়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যাতে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ না ঘটান, সে বিষয়েও সতর্ক করেন সরকারপ্রধান।

সম্প্রতি কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এমনকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাওচুরের ঘটনা ঘটে।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।

পরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর থাকবে না।

ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশ থেকে আসা ছাত্রলীগের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, “ছাত্ররা পড়াশোনা করবে। ছাত্রদের পড়াশোনায় কিসে ভালো হবে, না হবে আমরা তা জানি। কারণ, আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেই এসেছি। কাজেই সেটা আমাদের জানা আছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রথম কাজ হচ্ছে; শিক্ষা গ্রহণ করা।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “শিক্ষার ব্যাপারে কী নীতিমালা, কী ভাবে কী করতে হবে… নিশ্চয় আমাদের বয়স হয়েছে। আমরা অনেক ভালো জানি। আমরা জানি বলেই সেই ভাবে সময় উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারে কমিটি করার জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে কমিটি করে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে রোববার থেকে ফের আন্দোলনের ঘোষণা রয়েছে তাদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কথায় কথায় দাবি করলে তো হবে না। একটা দেশের কল্যাণ কীভাবে করতে হয়, উন্নয়ন কীভাবে করতে হয়, শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়, উন্নত জাতি গড়ে তুলতে হয়; আমরা তা জানি। … এই ধরনের ঘটনা আমি আর চাই না।”

উপাচার্যরে বাড়িতে আক্রমণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরাও তো আন্দোলন করেছি। ভিসির বাড়ির ভেতরে ঢুকে, তার রুমে লুটপাট করা, রুম ভাঙা, তাকে ধাক্কা দেওয়া; এই ধরনের ঘটনা কোনো দিন কোনো ইতিহাসে ঘটে নাই।”

ওই ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে অনেকে ধরা পড়েছে, অনেকে ধরা পড়বে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত, আর লুটপাট করতে যারা নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমি নির্দেশ দিয়েছি।”

আর শিক্ষকদের সমালোচনায় তিনি বলেন, “ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, শিক্ষকদের অপমান করা.. এটা শুধু ছাত্র না, আমি শিক্ষকদেরও বলব, শিক্ষকরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে লাগবে, আর তারা দ্বন্দ্ব করবে, তার ফল ছাত্ররা ভোগ করবে, সেটাও আমি চাই না।”

শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন- “ছাত্ররা শিখবেটা কী?”

কারও কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারো যদি কিছু বলার থাকে বলবেন। আমরা তো দেখি, দেখব। কেউ তো বলতে পারবে না যে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে আমরা সমাধান করি নাই।”
কিন্তু কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হলে তা ‘বরদাস্ত করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।

ছাত্রলীগের প্রতি নির্দেশ

ছাত্রলীগের সদস্যদের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তি থেকে দূর থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ধরনের কাজে কেউ যদি জড়িত থাকে, তাকে সাথে সাথে বহিষ্কার করতে হবে।”

ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতেও ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি ছাত্রলীগের ছেলেদের বলব, রাস্তা কীভাবে পার হতে হয়, কীভাবে রাস্তায় চলতে হয় সেটাও জানতে হবে। রাস্তার মাঝখান দিয়ে হটাৎ দৌড় মারবে, আর গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট হলে সেই ড্রাইভারকে মারবে; সেটা তো হয় না। রাস্তায় চলতে হলে কীভাবে চলতে হয়; সেটা আগে জানতে হবে শিখতে হবে।”

গত মাসের শুরুতে কারওয়ান বাজারে দুই বাসের রেষারেষিতে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই দুই মাসের মধ্যে বিআরটিসির একটি বাসে থাকা ওই তরুণের মাথার সামনে ও পেছনের হাড় ভেঙে যায়, মস্তিষ্কের সামনের অংশেও আঘাত লাগে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ এপ্রিল রাতে মৃত্যু হয় রাজীবের। ওই দুর্ঘটনা এবং রাজীবের মৃত্যু পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাসে যাওয়ার সময় হাত ঝুলিয়ে বসে থাকবে, মাথা ঝুলিয়ে বসে থাকবে। আর হাত গেলে সেই দোষ বিআরটিসির হবে, সেই দোষ ড্রাইভারের হবে; তাতো না। ট্রাফিক রুল সবাইকে শিখতে হবে।”

তিনি শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে বলেন এবং যার যার ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ করার তাগিদ দেন।

পাশাপাশি ছুটিতে নিজের এলাকায় গেলে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দিতে উদ্যোগী হওয়ার কথাও তিনি বলেন।

ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষ কী সেবা পাচ্ছে… দরকার হলে সেখানে ভলানটারি সার্ভিস দিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কোথাও দুর্নীতি হচ্ছে কি না- সেটাও দেখতে হবে।”

তিনি বলেন, নেতা কেউ বানিয়ে দিলেই হবে না, নিজের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেই নেতৃত্ব অর্জন করে নিতে হবে।