সাইফুল্লাহ নাসির, বরগুনা প্রতিনিধিঃ বরগুনার তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা রহমানের খামখেয়ালীপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী।মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,উপজেলা পরিষদ,ইউপি চেয়ারম্যানরা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ তাকে বর্জন করে পৃথক পৃথকভাবে জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে। ইউএনও’র খামখেয়ালীপনায় উপজেলা প্রশাসনের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদিতে না পারায় ক্ষুব্ধ সর্বস্তরের মানুষ।এসব ঘটনায় এবার ইউএনও’র অপসারণ দাবী করেছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে,এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ফারজানা রহমান তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।তালতলীতে যোগদানের পর তিনি শুরু থেকে এককভাবে সবকিছু চালাতে চাইছেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতাদের মতামতকে তোয়াক্কা না করেই চলছে তার আধিপত্য।তার ইচ্ছা মাফিক চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম।
উপজেলার পরিষদের মাসিক সভা তার নিজের মত করে চালিয়ে থাকেন।সমন্বয় সভায় সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে চালিয়ে যান তার কর্মকান্ড।জনপ্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে উন্নয়ন কর্মকান্ডে তার মতো করে থাকেন।এতে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
দিন দিন জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের লোকজনের সাথে তার মতপার্থক্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।ফলে ইউএনও’র সাথে রাজনৈতিক নেতা,জনপ্রতিনিধিদের সাথে বিরোধ চরম আকার ধারন করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত গত ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান উপজেলা পরিষদ,ইউপি চেয়ারম্যান,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগ  বর্জন করে।তাদের অভিযোগ,ইউএনও ফারজানা রহমান খামখেয়ালী করে ঢিলেঢালা ভাবে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।এনিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় উপজেলা প্রশাসন,ইউপি চেয়ারম্যান,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে।ফলে ইউএনও’র খামখেয়ালীপনার কারনে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন তারা।
এদিকে,তিনি তালতলীতে ইউএনও হিসেবে যোগদান করার পরে ভূমি প্রশাসনের দায়িত্ব পান।তিনি দায়িত্বে আসার পর থেকেই ভূমি অফিসের সকল কাজ স্থাবির হয়ে পড়ে।অফিসের কর্মচারীরা তার খামখেয়ালিপনাকে কাজ স্থবির হওয়াকে দায়ী করেছেন।কর্মচারীরা জানান,কোন কাজের সকল কাগজপত্র সম্পন্ন করে তার কাছে উপস্থাপন করলেও দিনের পর দিন ফাইল তার টেবিলে পড়ে থাকে।ওই টেবিল থেকে ফাইল নড়ে না।তার খামখেয়ালিপনার কারনে অর্জিত হচ্ছে না বর্তমান সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রম।এসিল্যান্ড ফারজানা রহমান নিয়মিত অফিস না করায় কাগজপত্র আটকে থাকায় জমি ক্রয় বিক্রি না হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
ইতোমধ্যে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ মোখলেছুর রহমান তার (ইউএনও) অনিয়মের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ বরগুনা’র উপ-পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল নাসেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তালতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোসলেম আলী হাওলাদার বলেন,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান খামখেয়ালী করে আমাদেরকে দাওয়াত দেয়নি।আমরা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় উপস্থিত হয়েও অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারিনি।আমরা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করেছি।তিনি আরো বলেন,ইউএনও এহেনো কার্মকান্ড তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন ও তার অপসারনের দাবী জানাই।
উপজেলা পরিষদের প্যানেল-১ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান হাওলাদার বলেন,শোক দিবস অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় ছিলাম।কিন্তু ইউএনও ওই সভার রেজুলিউশনে আমার নাম রাখেনি এবং দাওয়াত দেয়নি। কিভাবে সে অনুষ্ঠানে থাকবো।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ছোটবগী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, ইউএনও উন্নয়ন কাজে সমন্বয় করেন না।তার ইচ্ছা মাফিক  উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত করায় স্থাবির হয়ে পরেছে কার্যক্রম।ইউএনও ঠিকমত অফিস করেন না।উন্নয়নমূলক ফাইলে ঠিক সময় স্বাক্ষর না করায় মুখথুবড়ে পড়েছে উন্নয়ন কর্মকান্ড।তিনি আরো বলেন,জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান ইউএনও সমন্বয় না করায় আমরা অনুষ্ঠানে যোগদান করিনি।আমরা দলীয় কার্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালন করেছি।তিনি আরো বলেন,ইউএনও দায়সারা ভাবে জাতীয় শোক দিবস পালন করার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবী-উল-কবির জোমাদ্দার বলেন,উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে কোন সমন্বয় করেনি এবং প্রশাসনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোন দাওয়াত পাইনি।তিনি আরো বলেন,ইউএনও দায়সারা ভাবেই জাতীয় শোক দিবস পালন করছে।দায়সারা ভাবে জাতীয় শোক দিবস পালন করায় আমাকে আহত করেছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান দাওয়াত না দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টু অপসারণ হওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান-১ খলিলুর রহমান হাওলাদারকে নিয়ে শোক দিবসের প্রস্তুতি সভাসহ উপজেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি।শোক দিবস অনুষ্ঠানের পূর্ব মুহূর্তেও তাকে ফোন দিয়ে ছিলাম,কিন্তু সে আসেনি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকেও কোথাও খুঁজে পাইনি।তিনি আরো বলেন,শোক দিবসের প্রস্তুতি সভার রেজুলিউশনের কপি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসে পাঠানো হয়েছে।