অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নাশকতায় উসকানি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরের কোতোয়ালী থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সাংবাদিকদের বলেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে চলমান ছাত্র আন্দোলনে নাশকতার উস্কানি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে।

শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর একটি অডিও কথোপকথনটি ভাইরাল হয়। এ অডিওতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভাইরাল হওয়া অডিওর কথোপকথন:

আমির খসরু: হ্যালো

নওমি: হ্যালো, আংকেল, নওমি বলছিলাম

আমির খসরু: হ্যাঁ, নওমি ভালো আছো? নওমি: আপনি ভালো আছেন?

আমির খসরু: হ্যাঁ, ভালো আছি। তোমরা কি একটু ইনভলভ টিনভলভ হচ্ছো এগুলোতে নাকি?

নওমি: জ্বি, জ্বি। আংকেল, আমি তো এই যে কুমিল্লায় আসলাম। আমির খসরু: কুমিল্লায় না, নামায় দাও না। তোমাদের মানুষজন সব নামায় দেও না।

নওমি: হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. হ্যাঁ… হাইওয়েতে নামছিল।

আমির খসরু: মানুষজন নামায় দাও, হাইওয়েতে-টাইওয়েতে অসুবিধা নাই। ঢাকায় মানুষজন নামায় দাও ভালো করে। বুজছো? তোমাদের তো আর চেনে না। নওমি: না… না… না…।

আমির খসরু: তোমাদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে তোমরা সব নেমে পড় না ঢাকায়…।

নওমি: জ্বি…জ্বি..জ্বি…, কনটাক্ট করতেছি সবার সঙ্গে। আমির খসরু: কন্টাক্ট কর না। কখন আর কন্টাক্ট করবা? এখনই তো টাইম। আর কবে? এখন নামতে না পারলে তো আবার ডাউন করে যাবে। তুমরা নাইমা যাও না একটু বন্ধুবান্ধব নিয়ে…।

নওমি: হ্যাঁ..হ্যাঁ..হাইওয়েতে নামছিল তো, ঢাকা-চিটাগাংয়ে। এখানে এসপি সাহেব ঝাড়ি দিছে সবাইকে। সবাইকে উঠায়ে দিছে…।

আমির খসরু: হাইওয়ে টাইওয়ে অসুবিধা নাই। ঢাকায় নামায় দাও। ঢাকা হলে সারা দেশে এমনেই হবে। তোমরা ঢাকায় এসে…এখানে তো কুমিল্লা দরকার নাই আমার। তোমরা ঢাকায় এসে তোমাদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে ২০০-৫০০ জন ওদের সঙ্গে জয়েন করে যাও।

নওমি: জ্বি আংকেল। এমনে সবাই সংগঠিত হচ্ছে। আমির খসরু: সংহতি দিয়ে কী হবে। তোমরা যারা আছো নাইমা যাও না।

নওমি: আংকেল একটা ছোট্ট বিষয়।

আমির খসরু: ফেসবুক টেসবুকে পোস্টিং-টোস্টিং করো সিরিয়াসলি। নওমি: হ্যাঁ, এইটা করতেছি। এটাতে অ্যাকটিভ আছে সবাই। আমি আসতেছি।

আমির খসরু: হ্যাঁ করো। কুমিল্লা বসে থেকে লাভ কী! এখানে এসে জয়েন করো।

ভাইরাল হওয়া এই অডিও প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তো দলীয়ভাবেই তাদের সমর্থন দিয়েছি। কেউ যদি সহযোগিতা করতে চায়, আমরা তো বলেছি যে করো। দল থেকে সমর্থন দিয়েছে। কোটি-কোটি মানুষ সমর্থন দিয়েছে। তিনি বলেন, সহযোগিতা মানে তো ওদের সঙ্গে আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে, এমন না। সহযোগিতা সারা দেশের মানুষ করছে, পানি খাওয়াচ্ছে, ভাত খাওয়াচ্ছে, তাদের জন্য টিফিন নিয়ে যাচ্ছে। তো, সারা দেশের মানুষই তো সহযোগিতা করতেছে।’

এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, একদিকের কণ্ঠ আমির খসরু মাহমুদের। অন্যদিকের যে ছেলেটি নওমি তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

এদিকে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অডিও ফোনালাপ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনারকে সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রশ্ন করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটার অডিও আছে আমাদের কাছে আছে। আন্দোলন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। অতীতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র কাজে আসেনি। ছাত্রদের উদ্দেশ্য মহৎ। তাদেরকে ভিন্নপথে পরিচালিত করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

গত রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল রেডিসনের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় জাবালে নূর (ঢাকা মেট্রো ব-১১৯২৯৭) পরিবহনের একটি বাস।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন অনেক শিক্ষার্থী।

এ সময় মোহাম্মদপুর-আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস তাদের ওপর উঠিয়ে দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক ছাত্র ও এক ছাত্রী নিহত হন। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে।