দর্পণ ডেস্ক : সৌদি আরবে নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আরো একটি মাইলফলক যোগ হলো গত রোববার। সরকারি টেলিভিশনে এই প্রথম কোনো নারী রাতের মূল সংবাদ উপস্থাপনা করে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। এদিন ‘সৌদি টিভি চ্যানেল ১’-এ দেখা যায়, উইম আল দাখিল নামের ওই নারী আরেক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে সংবাদ পাঠ করছেন।
সৌদি নারীদের অগ্রযাত্রার এই পথ অবশ্য সহজ ছিল না। গত বছর পর্যন্ত সৌদি আরবই ছিল বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোও নিষিদ্ধ ছিল। দেশটিতে মাঝেমধ্যে যে প্রতিবাদী নারীরা উঠে আসেনি, তা নয়। তবে সেই নারী বিপ্লবের সুফলও আসতে শুরু করে আবার রাষ্ট্র তথা সরকারের হাত ধরেই। এ বছরেই সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেছিলেন ভিশন ২০৩০। সেই ঘোষণাই ছিল কার্যত যুগান্তকারী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের নিয়োগের ওপর শতাব্দী প্রাচীন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা জানান যুবরাজ। অর্থনীতিকে শুধু খনিজ তেলের ওপর নির্ভরশীল না রেখে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নারীদের জন্য খুলে যায় এক দরাজ বিশ্ব। বোরকার আড়াল থেকে বেরিয়ে নারীরা খুঁজে পেতে শুরু করে নিজস্ব সত্ত্বা।
তাদেরই অন্যতম অগ্রদূত উইম আল দাখিল। রোববার সন্ধ্যায় সবাইকে চমকে সরকারি টিভি চ্যানেলে খবর উপস্থাপন করেন উইম আল দাখিল। অন্যসব ক্ষেত্রের মতোই তিনিও যেকোনো পুরুষের চেয়ে কম কিছু যান না, প্রথম দিনই তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন উইম। সৌদি টিভিও গর্বের সঙ্গে উইম আল দাখিলের নিয়োগের কথা টুইট করে জানিয়েছে।
যুবরাজের সেই ঘোষণার পর থেকেই বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রে নারীদের নিয়োগ শুরু হয়েছে। এ মাসেই রিয়াদের বিমান সংস্থা ফ্লাইনাস বিমানে কো-পাইলট এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে নারীদের নিয়োগ করবে তারা। তার আগে জুনেই নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরও আগে মার্চে সৌদিতে প্রথম আয়োজন করা হয় নারীদের দৌড়। তাতেও বিপুল সাড়া পড়ে।
এর আগে ২০১৬ সালে অবশ্য একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সকালের দিকে খবর পড়তে দেখা গিয়েছিল জুমানা আল শামি নামের এক নারীকে। সেদিক থেকে প্রথম টিভি অ্যাংকর হিসেবে জুমানার নাম থাকলেও উইমই প্রথম সরকারি টিভি চ্যানেলের পেশাদার নারী অ্যাংকর। তার হাত ধরেই সৌদিতে নারী বিপ্লবের এক নবযুগের সূচনা হলো বলেই মনে করছে বিশ্ববাসী।