অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে তাঁকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম স্মরণে আগামী ১৪ মে বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম গত বুধবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজ বাসভবনে মারা যান। ওই রাতে তাঁর মরদেহ রাখা হয়েছিল অ্যাপোলো হাসপাতালের হিমঘরে। সেখান থেকে গতকাল সকালে মরদেহ গুলশান আজাদ মসজিদে গোসল করিয়ে নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠান হয়।

ব্যক্তিগতভাবে মুস্তাফা নূরউল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব আখতারী মমতাজ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, প্রাবন্ধিক-গবেষক মফিদুল হক, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, কবি কামাল চৌধুরী, ড. ইনামুল হক প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবে আরো শ্রদ্ধা জানায় ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, ছায়ানট, উদীচী, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, কণ্ঠশীলন, মহিলা পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সরকারি সংগীত কলেজ, থিয়েটার ইত্যাদি। সব শেষে সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ছিলেন প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী। তিনি কোনো আলোচনাসভায় এলে কিছু লিখে আনতেন, লিখে না আনলে বক্তব্যের আগে কিছু লিখে নিতেন, তা অনুসরণ করে তারপর বক্তব্য দিতেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম সাহিত্য-সংস্কৃতির বরপুত্র। সংস্কৃতির সব শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ।

রাশেদ খান মেনন বলেন, বাঙালির প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ও মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন এই মহীরুহ।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘এ দেশ সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের এক মহীরুহকে হারিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বা বাঙালি চেতনার কথা যদি বলি, তবে সারা জীবন সেই চেতনা লালন করেছেন তিনি। সৃজনকর্মে তিনি তা তৃলে ধরেছেন বারবার।’

শহীদ মিনার থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।