অনলাইন ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য ঘটকালি করতে চেয়েছিলেন মিডিয়ার কল্যাণে সেখবর এখন টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড।
পলিটিকোর নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া ওই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সম্পর্কে ট্রাম্পের স্বল্প জ্ঞানের পরিচয় ফুটে উঠেছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের।
কিন্তু আসলে কি ঘটেছিল, ট্রাম্প কেন তাঁর এত ব্যস্ততা রেখে ঘটকালীর মত ব্যাপারে হঠাৎ এত আগ্রহী হয়েছিলেন।
এ ঘটনা গত বছর নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের আগেকার।
সংগত কারনেই মোদী-ট্রাম্প বৈঠকটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পও এই বৈঠককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। পুরো আমেরিকা তখন মোদীর আগমনে সাজ সাজ রব। যেকারনে হোয়াইট হাউসের কর্মীরা ট্রাম্পকে ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলো সম্পর্কে জরুরি তথ্য জানিয়ে দিচ্ছিলেন। সে সময় ট্রাম্প নেপালকে ‘নিপল’ ও ভুটানকে ‘বাটন’ বলছিলেন। ভারতের সীমান্তবর্তী ওই দুই দেশের নাম নাকি কখনই শোনেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই সময় হোয়াইট হাউসে উপস্থিত দুই কর্মকর্তার সূত্রে এমন খবর দিয়েছে পলিটিকো।
একটি সূত্র জানায়, ‘তিনি এসব দেশ সম্পর্কে জানেন না। তিনি মনে করেন এসব ভারতেরই অংশ।’ মোদীর আমেরিকা ভ্রমন যাতে আনন্দময় হয় তার কোন কমতি রাখতে চাচ্ছিলেন না ট্রাম্প। তাই তার স্ত্রী সম্পর্কেও তথ্য নিচ্ছিলেন।
নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ট্রাম্প কিভাবে যেন শুনেছিলেন যে মোদি অবিবাহিত।
পলিটিকো লিখেছে, সাধারণত রাষ্ট্রনায়করা সস্ত্রীকই আসেন। হোয়াইট হাউসের কর্মীরা ট্রাম্পকে বলছিলেন, এক্ষেত্রে সেটা হবে না।


কেননা মোদিকে অনেকেই অবিবাহিত বলে জানলেও তাঁর স্ত্রী রয়েছেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মোদি নিজেই লিখেছিলেন তাঁর স্ত্রী আছে। তিনি বিবাহিত। তাঁর সহধর্মিণীর নাম যশোদাবেন। মোদি-যশোদাবেনের বিয়ে হয়েছিল গোত্রের প্রথা অনুযায়ী, তখন উভয়ই ছিলেন কম বয়সী। পরে আরএসএসের আদর্শ গ্রহণ করে গ্রাম ও পরিবার ত্যাগ করেন মোদি। সুদর্শন মোদী একজন উচ্চ মার্গের সাধু পুরুষ। নারীদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে ট্রাম্প যতটা আগানো মোদী ঠিক বিপরীতভাবে ততটাই পিছানো বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন স্ত্রীর যোগাযোগ নেই যেনে হোক কিংবা তিনি অবিবাহিত আছেন ভেবে হোক, ট্রাম্প হেসে বলেন, তাই নাকি? আমরা তো তাহলে উনার জন্য কনে জোগাড় করে দিতে পারি, ‘আহ, আমি যদি তাকে কারো সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারতাম!’
সহকর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে কৌতুক করে নরেন্দ্র মোদির জন্য ঘটকালির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। খবর পলিটিকো ম্যাগাজিন ও জিনিউজের।
তবে আসল ঘটনা যাই হোক না কেন, ট্রাম্প খুবই মিশুক স্বভাবের মানুষ। বিশ্ব নেতাদের তিনি প্রায়ই ফোনে খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। যদিও তিনি আমেরিকায় বসে দিনের আলোতে যখন ফোন দেন তখন অনেক দেশেই গভীর রাত বিধায় সে দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে ঘুম থেকে উঠে ট্রাম্প্রের ফোন ধরতে হয়, ট্রাম্পও বন্ধুর মত অনেকক্ষন তাঁদের সাথে খোঁশগল্প করেন। । এসব ফোনকলের কোনো কারণ থাকে না। তিনি আমেরিকার কুটনৈতিক নিয়ম কানুনের খুব একটা ব্যক্তিগত জীবনে আমলে নেন না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কূটনৈতিক জ্ঞান আর পুরোনো প্রটোকলের ধার ধারেন না ট্রাম্প।

পলিটিকো বলছে, বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার সময় ট্রাম্প বহুবার কূটনৈতিক ভুলভ্রান্তি করেছেন, ভুল উচ্চারণ করেছেন, টেলিফোনে কথা বলার সময় শিষ্টতা বজায় রাখেননি ইত্যাদি। ট্রাম্প নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না বলে অনেক সময় মার্কিন প্রশাসনকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু এর একটা ভালো দিকও আছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারা হুকাবি স্যান্ডার্স বলেন, খোলামেলা স্বভাবের জন্যই আমেরিকার বন্ধু দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দিব্যি বন্ধুত্ব জমে উঠেছে ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউসের এক কর্মী জানান, শুধু মোদির জন্য কনে খুঁজে দিতে চাওয়াই নয়, ট্রাম্প মাঝে মাঝে ভারতীয়দের ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে ব্যঙ্গ করেন।
ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ট্রাম্পকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে কখন তিনি ভারত সফর করবেন, তা নিশ্চিত নয়।