অনলাইন ডেস্ক: ২০ দলীয় জোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিকে নিয়ে নতুন করে ভাবছে জোটের নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি। সিলেটসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে জামায়াতের রহস্যময় ভূমিকার কারণে দীর্ঘ দিনের এই সঙ্গীর প্রতি আকষর্ণ কমলেও ভোটের রাজনীতির কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নিয়ে নেতিবাচক ঘোষণা দিতে চাইছে না বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই দলের ভেতরে-বাইরে এবং দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। জবাবে দলটি বলছিল এই মিত্রতা আদর্শিক নয় শুধুই নির্বাচনী জোট। তবে সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত প্রার্থীর ভরাডুবি এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তাদের জোটে রাখার যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন প্রবল আকার ধারণ করেছে।
বিএনপিতে জামায়াত বিরোধীরা মনে করছেন- ভোটের মাঠে এখন আর জামায়াতের জনপ্রিয়তা নেই, সময় এসেছে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের।বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। সেখানে জামায়াত ইস্যুও গুরুত্ব পায়।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে নিয়ে সরকার বিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই দলটির প্রতি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের শর্ত দিয়েছেন ।
বিএনপি সূত্র জানায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্য গঠনের পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতের ভোট ব্যাংকের বিষয়টি বিবেচনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির নেতারা মনে করছেন, নিবন্ধনহীনতার কারণে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ না থাকায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনে জামায়াতকে নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না। সার্বিক পরিস্থিতিতে জামায়াতকে নিয়ে কৌশলগত অবস্থানে থাকাটাই সুবিধাজনক মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
দেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি অতীতে সব সময় সুবিধাবাদী অবস্থানে রয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে কৌশলে ব্যবহার করে দেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান করে নেয়।
স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। পরবর্তী সময়ে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও জামায়াত অংশ নেয়। সেই নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় জামায়াতের সহযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করে।

জামায়াতের তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মূলা দেন। বিএনপি সেই ফর্মুলার বিরোধিতা করলেও আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তা সমর্থন করে। বিএনপি জামায়াতের সহযোগিতায় সরকার গঠন করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মূলা না মানায় বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয় জামায়াত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে জয়ী হলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামির ভরাডুবি হয়। মাত্র ৩টি আসন পেয়ে পরবর্তীতে বিএনপির সঙ্গে আবারও জোট বাধে দলটি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেই দৃশ্যমান।

এপ্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেন, ‘জোটের রাজনীতি, জোটের নির্বাচন, জোটের আন্দোলন, জোটের আসন বন্টণ এই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমার মনে হয় নতুন করে চিন্তা করবার সময় এসেছে। নতুন করে পথ চলবার সময় এসেছে।’‘নির্বাচন সকল রাজনৈতিক দল আলাদা করে করলে নির্বাচনের পর ওই সরকার গঠনে সমমনাদের নিয়ে জোট হতে পারে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জামায়াত নিজেদের যেভাবে মাপে, যত বড় করে মাপে, তত বড় নয়, আমাদের জন্য সুবিধা হলো পরবর্তী পর্যায়ে তাদের অযৌক্তিক আবদার নাকচ করার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সাহসী ভূমিকা রাখতে পারবো।’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এটা দিলে তো নানা রকমের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। আমরা তো এটা এখন বলতে চাই না। কারণ আমরা এখনও একটা জোটের মধ্যে আছি। আমরা তো আলাদা চিন্তা করতে পারছি না এখনও।’ তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ