দর্পণ ডেস্ক : ১০ বছর আগে ২০০৮ সালে এই গড় আয়ু ছিল ৬৬ বছর আট মাস। ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। অর্থাৎ, গত এক দশকে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে পাঁচ বছর দুই মাস। মূলত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবার উৎকর্ষের কারণেই এই আয়ু বাড়ছে। এ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষায় অগ্রগতি এবং দরিদ্রতা হ্রাসও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

বিবিএসের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে পুরুষের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু দুই বছর নয় মাস বেশি। পুরুষদের গড় আয়ু ৭০ বছর ছয় মাস আর নারীদের ৭৩ বছর পাঁচ মাস। পুরুষ এবং নারীর গড় হিসাবে আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। এক দশক আগে ২০০৮ সালে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৬ বছর আট মাস। তখন নারীদের গড় আয়ু ছিল ৬৮ বছর আর পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫ বছর ছয় মাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আন্তর্জাতিকভাবেও নারীদের গড় আয়ু পুরুষের তুলনায় বেশি। শারীরিক গঠনের কারণেই নারীর গড় আয়ু বেশি হয়ে থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন, আয় বৃদ্ধিসহ উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকের কারণে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে।

১৯৯৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে তিনটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সরকার। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তৃতীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচিতে ৫১ হাজার ৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিক .স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশুসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিসেবা এবং সচেতনতামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ গড় আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। গত বছর চতুর্থ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ কর্মসূচির ব্যয় করা হবে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।

দারিদ্র্যের হারের সঙ্গেও গড় আয়ুর বৃদ্ধির সংযোগ রয়েছে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক পাঁচ শতাংশ। একই সময়ে হতদরিদ্রের হার ছিল ১৭ দশমিক ছয় শতাংশ। ২০১৬ সালে এই হার ২৪ দশমিক তিন শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ১২ দশমিক নয় শতাংশে নেমে আসে। ২০১০ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৭ দশমিক সাত শতাংশ। ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ৭১ বছর ছয় মাস। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার কমে ২২ দশমিক তিন শতাংশে নেমেছে, হতদরিদ্রের হারও নেমে এসেছে ১১ দশমিক দুই শতাংশে। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০১৭ সালে গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এলে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়। ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে সরকারি সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য ও চিকিৎসা খাতে দরিদ্র মানুষের খরচ কমে।

২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গড় আয়ুর দেশ জাপান। এশিয়ার এ দেশটির মানুষের গড় আয়ু ৮৩ বছর ৭ মাস। এর পর রয়েছে যথাক্রমে সুইজারল্যান্ড (৮৩ বছর চার মাস), সিঙ্গাপুর (৮৩ বছর এক মাস) অস্ট্রেলিয়া ও স্পেন (৮২ বছর আট মাস) ইত্যাদি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপে মানুষের গড় আয়ু ৭৮ বছর পাঁচ মাস, শ্রীলংকায় ৭৪ বছর নয় মাস, নেপালে ৬৯ বছর দুই মাস, ভারতে ৬৮ বছর তিন মাস এবং পাকিস্তানে ৬৬ বছর চার মাস। অর্থাৎ, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে।