দর্পণ ডেস্ক : মাত্র জন্ম নেয়া শিশুটি। এখনো ভালো করে চোখ খুলে দেখা হয়নি পৃথিবী। নবজাতকের কান্না বলে দিচ্ছে, জন্মের পর থেকেই প্রতিটি মুহূর্ত মায়ের অভাব যেন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। চাইলে কী মায়ের অভাব পূরণ করা যায়, কেউ কী পারবে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে রোজিনার রেখে যাওয়া সন্তানকে বড় করতে?

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলাশ্বর গ্রামের রোজিনা (২০) গত শুক্রবার রাতে মারা যান। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের অবহেলা রোজিনাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে শিশুটির মা হারানোর পথ তারাই তৈরি করে দিয়েছে।

গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বরমী বাজারের নিউ লাইফ হাসপাতাল অ্যান্ড পপুলার ল্যাবে রোজিনার সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অপারেশনের একপর্যায়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর আগেই মারা যান রোজিনা। তবে তার সন্তান সুস্থ রয়েছে।

মৃত রোজিনা গিলাশ্বর গ্রামের কলিম উদ্দিনের মেয়ে। রোজিনার সঙ্গে এক বছর আগে গফরগাঁও উপজেলার চাকুয়া গ্রামের আতিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। স্বামী আতিকুল সাভারের একটি কারখানায় কাজ করেন। রোজিনা তার বাবার বাড়িতেই থাকতেন।

রোজিনার মা জোসনা আক্তার জানান, তার মেয়ের এটা ছিল প্রথম সন্তান। এ নিয়ে সে খুব আনন্দিত ছিল। বাচ্চার জন্য সে নিজেই কয়েকটি কাঁথা সেলাই করেছিল। অনাগত সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার।

শুক্রবার দুপুরে রোজিনার প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে বরমী বাজারের নিউ লাইফ হাসপাতাল অ্যান্ড পপুলার ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা রোজিনাকে দেখে সিজারের ব্যবস্থা করতে বলেন।

অপারেশনের পর রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। একদিকে বরমী এলাকার সড়কের অবস্থা খারাপ, অন্যদিকে অতিরিক্ত রক্তরক্ষণ বন্ধ না করেই কর্তৃপক্ষ গাড়ি ডেকে রোজিনাকে তুলে দেন। তবে সেখানে পৌঁছানোর আগেই রোজিনার মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহের চিকিৎসক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোজিনার মৃত্যু হয়েছে।

রোজিনার বাবা কলিম উদ্দিন জানান, তার মেয়ে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পর সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেয়। তবে চিকিৎসকরা বুঝে শুনে চিকিৎসা দিলে হয়তো তার মেয়েকে হারাতে হত না। অনেকটা নিরুপায় হয়ে তিনি বলেন, এখন কার কাছে বিচার দেব, বিচার চাইলেই কী রোজিনা ফিরে আসবে? তবে এ ধরনের ঘটনা আর যাতে কারও বেলায় না ঘটে তার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই।

তবে রোজিনার চিকিৎসা অবহেলার কথা অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, শুক্রবার রোজিনার স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলে গাইনি সার্জন মেরিনা জাহান অপারেশন করেন। এ সময় রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে চিকিৎসক মেরিনা জাহানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঈনুল হক বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। ঘটনাটি জানার পর রোববার সন্ধ্যায় একটি টিম ওই হাসপাতালে যায়। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে একজন গাইনি কনসালট্যান্ট, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ও একজন সার্জারি বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আগামীকাল সকাল থেকে কাজ শুরু করবে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।