অনলাইন ডেস্ক : ৭ম শ্রেণির ছাত্রী হিরার (১৩) চোখের সামনে খুন করা হয়েছে তার বাবা ও বোনকে। নিজের দুলাভাই চোখের সামনেই নির্মভাবে কুপিয়ে হত্যা করে হিরার বাবা ও বোনকে। সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পরও প্রায় সময়ই অজানা ভয়ে আঁতকে ওঠছে হিরা। হত্যার দৃশ্য মনে পড়তেই হাউমাউ করে কাঁদছে সে।
আগে থেকেই মা নেই, এখন বাবা-বোনও খুন হলেন। আপন দুই ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে হিরা। এখন তার একটাই চাওয়া, বাবা ও বোনের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাটের ভাড়া বাসায় কথা হয় হিরার সাথে। কথা বলার সময় মাঝে মধ্যেই ডুকরে কেঁদে উঠছে হিরা। কাঁদতে কাঁদতেই হিরা তার বাবা ও বোনের হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক ঘটনা জানায়।
হিরা জানায়, ৫ বছর আগে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বৈশাখীপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান আপনের সঙ্গে তার বোন রিপা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা পাড়েরহাট বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। তাদের আড়াই বছর বয়সের একটি ছেলে আছে।
সে জানায়, দুলাভাই আপন নেশা করে প্রায়ই তার বোনকে মারধর করত। ৬ মাস আগে পারবারিক কলহের জেরে রিপা বাবার বাড়িতে এসে থাকা শুরু করে। এ নিয়ে শুক্রবার শালিশ বৈঠকের কথাও ছিল। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে হিরা তার বোন-বাবার সঙ্গে পাড়েরহাট বাজারে যায়। ফেরার পথে স্থানীয় শহীদ মিনারের কাছে আচমকা আপন ধারালো দা দিয়ে রিপাকে (২০) কে কোপাতে শুরু করে। এ সময় তার বাবা বাধা দিতে গেলে তাকেও কুপিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। বাবা ও বোনকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও কুপিয়ে আহত করে। এ সময় হিরার চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আপনকে আটক করে পুলিশে দেয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করে। পরের দিন শুক্রবার হিরার ছোট চাচা রিপন ফকির বাদী হয়ে ইন্দুরকানী থানায় ঘাতক হাবিবুর রহমান আপনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. জাকির হোসেন জানান, ঘাতক আপন থানায় এবং আদালতে জবানবন্দীতে পারিবারিক কলহের জেরে ক্রোধে তাদেরকে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
তিনি জানান, হিরা পাড়েরহাট বন্দরের সন্মিলিত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। তার ছোট একটি ভাই আছে। সে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। দরিদ্র বাবা পাড়েরহাট বাজারে ভাড়া বাসায় থেকে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। বাবা-মা হারিয়ে আজ তারা নিঃস্ব।