দর্পণ ডেস্ক : গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্যে রেকর্ড করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপিতে মনোনয়ন রয়েছে ৫৫৫ জনের। ধরুন, ৩০০ জন আছে। এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট আছে, ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা আছে। সবাই কি বিএনপি? ধরুন ৩০০ জন প্রার্থী, তাহলে ৪৫৫ জন কোত্থেকে এলো? আমরা তো বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি। বিএনপি এবার মনোনয়ন বাণিজ্যে রেকর্ড করেছে। এই যে সব বাদ যাওয়া প্রার্থী ঋণখেলাপি ও দণ্ডিত। ১৪১ জন প্রার্থী বাদ যাওয়ার পরও এখনও ৫৫৫ জনের নাম রয়ে গেছে বৈধ। এটা কি মনোনয়ন বাণিজ্য নয়?
তিনি বলেন, কোনো কোনো শীর্ষ নেতা ঢাকা থেকে পালিয়ে গেছে। যাদের টাকা নিয়ে পালিয়েছে, তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে। বিএনপি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১০ তারিখের আগে ক্যাম্পেইন করা যাবে না। তাদের শীর্ষ নেতারা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে সরকার পুতুল নাচের খেলায় মেতেছে, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, তাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াই একটা পুতুল নাচের খেলা।
সরকার কেন করবে, নির্বাচন কমিশন কি সরকার? নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পুতুল নাচের খেলা যেমনি নাচে তেমনি নাচাও, পুতুলের কি দোষ? দড়ি টানছে লন্ডন থেকে, ছাড়ছে আর ধরছে। কামাল হোসেন সাহেব তো নামমাত্র নেতা। অনেক দুঃখে হয়তো নির্বাচন করছেন না। নেতাও নেই মাথাও নেই। এই দলকে কে ভোট দেবে? মানুষ জিজ্ঞেস করছে আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবে? কি জবাব দেবেন মির্জা ফখরুল? আজ পর্যন্ত এই প্রশ্নের জবাব দেননি।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি। এজন্য তাবলিগ জামাতসহ অনেকের ওপর ভর করার চেষ্টা করছে। বিএনপি নেতা রিজভীর প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল বলেন, নয়াপল্টন হচ্ছে মিথ্যাচারের ফ্যাক্টরি। সেখানে একজন আবাসিক নেতা রয়েছেন। তিনি সব সময়ই মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন।
পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের নির্বাচনের সময় প্রত্যেক দলের একজন নেতা থাকে, পিএম ফেস থাকে। তাদের কোনো পিএম ফেস নাই। বিএনপির আচরণবিধি লঙ্ঘন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনকে আমরা ইতিমধ্যে জানিয়েছি।
জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করা বিষয়ক বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতিহাস বলে জিয়া পরিবারই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদে কারা বিদেশ পাঠিয়েছিল, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে কারা খুনিদের বিচার বন্ধ করেছিল, কারা পঞ্চম সংশোধনী করেছিল, বিএনপি করেছিল। ১৫ আগস্টের নেপথ্যে তারাই ছিল, খুঁজলে তাই বেরিয়ে আসবে। তারাই আবার সেই খুনিদের পুরস্কৃত করেছে, পুনবার্সিত করেছে।
আমাদের নেত্রীকে লক্ষ্য করে ২১ শে আগস্ট বোমা হামলা ঘটিয়েছিল। এর বিচার হয়েছে। আদালত রায় দিয়েছেন। আমরা জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করবো কিভাবে, তারাই তো বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, যা ইতিহাস প্রমাণ করছে।
বিএনপির অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সৎ মায়ের ভূমিকা পালন করছে, সরকার কোনো সহযোগিতা করছে না এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। যখন নির্বাচন কমিশন তাদের সঙ্গে নেই, তখন নির্বাচন কমিশন তো সৎমা হয়ে যাবে। তাদের পক্ষে না থাকলে সব কিছুই উল্টা। তাদেরকে যদি নির্বাচন কমিশন গ্যারান্টি দিতে পারে আগামী নির্বাচনে তারা জয়ী হবে। তাহলে কমিশন তাদের কাছে নিরপেক্ষ মনে হবে। তখন সৎমা থেকে আপন মা হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিৎ রায় নন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, এসএম কামাল হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।