অনলাইন ডেস্ক : আজ সকালে ফরিদপুর শহরের দক্ষিন ঝিলটুলি এলাকার একটি বাসা থেকে সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা ও সোনালি ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষিকার স্বামী মোটরপার্টস ব্যাবসায়ী শেখ শহিদুল ইসলামকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

নিহত ওই কলেজ শিক্ষিকার নাম সাজিয়া বেগম (৩৬)। তিনি দুই ছেলে নিয়ে এই বাসার একটি ফ্লাটে থাকতেন। তার স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ি রাজধানীর সুত্রাপুর থানার বানিয়া নগর।

ব্যাংক কর্মকর্তার নাম ফারুক হাসানের (৩৮) গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বুরুষবাগ গ্রামে হলেও থাকতেন রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার ৩৮ নং বাসায়। তিনি সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে লিগ্যাল মেটারস ডিভিশনে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে এই জোড়া খুন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে। যার উত্তর মিলছে না এখনো। তবে শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার মাঝে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম নাসিম বলেন, শিক্ষিকার লাশ দরোজার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় এবং ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ফ্যানের হুকের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার বুকেও আঘাতের ক্ষত রয়েছে। ফ্লাট থেকে রক্ত মাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে আমরাও ভেবেছিলাম শিক্ষিকাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে ব্যাংক কর্মকর্তা। কিন্তু বেশ কিছু সিম্পটম থেকে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। দুইটিই হত্যা বলে মনে করছি। বাকীটা তদন্ত করে আর ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জনান, নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা তার পরিচয় গোপন করে এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিল। কয়েকদিন আগেই সে এই বাসায় উঠেছে। আবার তার দেহেও আঘাতের ক্ষত ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিক্ষিকার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তবে তার কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া গেছে কিনা সে তথ্য এখনই বলতে রাজি হননি তিনি। জানান তদন্ত শেষে বলা যাবে। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের এর প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। পুলিশ সব কয়টি এ্যাঙ্গেল থেকেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

নিহত শিক্ষিকা সাজিয়া’র স্বামী শেখ মো. শহিদুল ইসলাম ও ফুফু আফসারী আহমেদ জানান, অন্য দিনের মত রবিবারও যথারীতি কলেজে যান সাজিয়া। বিকাল চারটায় স্বামীর সাথে ফোনে কথা হলে সাজিয়া বাসায় ফিরছেন বলে জানান। এরপর থেকে আর ফোন রিসিভ করেনি সে। রাত এগারোটার দিকে প্রথম ফ্লাটের মো. ফারুক হোসেনের ফ্লাটে ফারুক হাসানকে ঝুলন্ত ও সাজিয়াকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেয়া যায়। উভয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এদিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বেলা ২.৩০) নিহত দুই জনের লাশের ময়না তদন্ত চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন লাশ কাটা ঘরের ডোম দিলিপ।

বাড়ির মালিকের ছেলে ডেবিড হাসান জানান, নিহত কলেজ শিক্ষিকা ১ বছর আগে এই বাসা ভাড়া নেন। তিনি তার দুই সন্তান নিয়ে বাসায় থাকতেন। তার স্বামী ঢাকায় ব্যাবসা করেন। বিধায় মাঝে মাঝে এই বাসায় আসতেন। ঘটনার দিন তার স্বামী ফরিদপুরের বাসাতেই ছিলেন। আর ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক ১ মাস আগে ভাড়া নেন। ১ মাস আগে বাসা ভাড়া নিলেও তিনি থাকতেন না। দুই দিন আগে তিনি বাসায় এসে উঠেছেন।

এদিকে ফারুক হোসেন সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুরের কোন শাখায় কর্মরত ছিলেন না দাবী করেন সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর প্রিন্সিপাল শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শামসুল হক। তিনি জানান, ফারুক হোসেনের ছবি দেখে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে সে সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে লিগ্যাল মেটারস ডিভিশনে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সরকারী সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের শিক্ষিকার এমন নির্মম মৃত্যুতে শোক পালন করছে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহামুদ জানান, একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার আজকের তারিখের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মানুষের এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। যে বা যারাই সাজিয়া হত্যার সাথে জড়িত থাকুক না কেন তাদের অতিসত্বর আইনের আওতায় আনার দাবী জানাই আমরা।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, আমরা একাধিক সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আশা করি খুব শিগগির জানাতে পারবো সত্যটা কি।