অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ আইনগত সমস্যার মুখোমুখী হয়ে থাকেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে। আর সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলো হয় ভূমি সংক্রান্ত। বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জাস্টিস নিডস অ্যান্ড স্যাটিসফেকশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

নেদারল্যান্ডের হেগভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দ্য হেগ ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেশন অব ল’র (হিল) পরিচালনায় এবং নেদারল্যান্ড সরকার ও ব্র্যাকের সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কী কী ধরনের আইনগত সমস্যার মুখোমুখি হন, কীভাবে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করেন, সমাধানের জন্য তারা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে যান, তাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পান- এই প্রশ্নগুলোকে সামনে রেখে গবেষণাটি করা হয়েছে।

নিবিড় গুণগত সাক্ষাৎকারভিত্তিক পদ্ধতিতে পরিচালিত এ গবেষণায় সারা দেশ থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৬০০০ জন উত্তরদাতা অংশ নেন। ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন- হিল-এর হেড অব মেজারিং জাস্টিস ড. মার্টিন গ্রামাটিকভ, একই সংস্থার কোয়ান্টিটেটিভ জাস্টিস ডাটা অ্যানালিস্ট মার্টিন কাইন্ড। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন কর্মসূচির প্রধান সৈয়দা ফারিসা কবির।

গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো হলো- প্রতি বছর গড়ে ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ আইনগত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। তারা যেসব আইনগত সমস্যার সবচেয়ে বেশি মুখোমুখি হন তার ক্রমিক চিত্রটি এরকম: প্রতিবেশী ৪০%, জমির বিরোধ ২৯%, অপরাধ ২১%, পারিবারিক ১২%, অর্থ সংক্রান্ত ১২%, সমাজকল্যাণ সংক্রান্ত ১১%, ভোক্তা সংক্রান্ত সমস্যা ৯% এবং দুর্ঘটনা ও আঘাতজনিত ৮%।

সমস্যার গুরুত্বের দিক থেকে ভূমিবিষয়ক দ্বন্দ্ব-বিরোধ আইনগত সমস্যার মধ্যে সবার আগে স্থান পেয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে এক্ষেত্রে ক্রমিক চিত্রটি এ রকম: ভূমিবিরোধ ২৫%, প্রতিবেশী ২২%, অপরাধ ১২%, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ৭%, অর্থ সংক্রান্ত বিরোধ ৭%, সমাজ কল্যাণ ৫%, গৃহ সংক্রান্ত বিরোধ ৪%, দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত ৪%।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক গবেষণাটিতে পাওয়া ফলাফলের আলোকে দেশের অনানুষ্ঠানিক বিচার ও দ্বন্দ্ব নিরসন প্রক্রিয়া ও সালিশি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য অধিকাংশ সময় এসব অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। তাই অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শালিশের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা বা নীতিমালা থাকা জরুরি। এতে করে শালিশ প্রক্রিয়া আরও বেশি কার্যকর হবে।

দরিদ্র মানুষ যাতে প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারেন সে লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার করাও জরুরি বলে তিনি মত দেন।

ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির প্রধান সৈয়দা সাজেদা ফারিসা কবির বলেন, এই গবেষণায় যে ফলাফল বেরিয়ে এসেছে তার আলোকে দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য আইন সহায়তা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করার উপায় আমাদের ভাবতে হবে। একই সঙ্গে আইন ও বিধিমালা আরও সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে যাতে তারা আরও ভালোভাবে আইনের সুরক্ষা নিতে পারেন। তবে শুধু আইন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ালেই চলবে না, বরং অনানুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সবার জন্য কার্যকর আইনগত সহায়তাপ্রাপ্তি সহজ করতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: আইনগত সমস্যার শ্রেণিকরণ করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনগত অধিকার সম্পর্কে সহজ ভাষায় প্রয়োজনীয় তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো, আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থা এবং অনানুষ্ঠানিক বিচার ও শালিশ প্রক্রিয়ার কার্যকর সমন্বয় ঘটানো, কার্যকর ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে ব্যবহার করা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।